বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে ঘটে যাওয়া সংঘাতকে কেন্দ্র করে বন্ধ হয়ে যায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কার্যক্রম। তবে গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গত সোমবার (৫ আগস্ট) দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরদিন (৬ আগস্ট) থেকে চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
তবে নির্দেশনা থাকার পরও গত দুইদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী বা শিক্ষকদের কোনো উপস্থিতি চোখ পড়ছে না। বুধবার (০৭ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর ফার্মগেটের অদূরে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেই চিত্রই চোখে পড়ল। তেজগাঁও হলি ক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও তেজগাঁও কলেজে গিয়ে দেখা যায় মূল ফটকে তালা দেওয়া। কোথাও শিক্ষক, শিক্ষার্থী নেই। এমনকি কোনো নিরাপত্তাকর্মী নেই।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে ভেতরের দিকে অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া মেলেনি। তেজগাঁও হলি ক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের কয়েকজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশককে জানান, সহিংসতার মধ্যে সরকারি নির্দেশনায় স্কুল-কলেজ বন্ধ হওয়ার পর থেকে আর খোলেনি। গেটে তালা দেওয়ার পর থেকে আর কাউকে দেখা যায়নি।
এদিকে, আগামী ১১ আগস্ট থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এক নির্দেশনায় সেটিও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা ও নাশকতার কারণে প্রশ্নপত্র রাখার ট্রাঙ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে ১১ আগস্ট থেকে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না।
এর আগে গত ৩০ জুন থেকে শুরু হয় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় প্রথমে গত ১৮ জুলাইয়ের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তৃতীয় দফায় ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সূচি অনুযায়ী যত পরীক্ষা ছিল সব পরীক্ষা ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে নেওয়ার কথা জানানো হয়।
এদিকে, আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) জারি করা আদেশে, মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) থেকে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালুর কথা থাকলেও পুরোপুরি শুরু হয়নি। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি থাকলেও বেশিরভাগেই মূল ফটকে তালা লাগানো।
মূলত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনের একপর্যায়ে সংঘাত–সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে ১৭ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ৪ আগস্ট থেকে ১২টি সিটি করপোরেশন ও নরসিংদী পৌরসভা বাদে বাকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও বন্ধই রাখা হয়েছে।
অভিভাবকরা বলছেন, সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও নাশকতার ভয়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। একই কারণে শিক্ষক ও কর্মচারীরাও আসছেন না। এতে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলছে বলে জানালেন একজন শিক্ষক।