• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জবিতে ফোন কলের বিল দেখিয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ


সোহানুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৪, ০৮:২৩ পিএম
জবিতে ফোন কলের বিল দেখিয়ে সাড়ে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি : প্রতিনিধি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ চলার সময় বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করার নামে ‘ফোন কল’ করে অক্লান্ত পরিশ্রম করা হয়েছে উল্লেখ করে সম্মানী বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় সাড়ে লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ কয়েকজন কর্মকতার বিরুদ্ধে। এতে বিশাল অনিয়ম হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে অভিযুক্ত এক কর্মকর্তাকে এবার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তার নিয়োগের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৪ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। ভূমি অধিগ্রহণ চলাকালে বিভিন্ন জায়গায় ফোনকল এবং সরাসরি যোগাযোগের নাম করে সম্মানী বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া, সাবেক রেজিস্ট্রার  প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (সংস্থাপন) মোহাম্মদ জাহিদ আলম, সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেন সরকার, সেই সময়ের সেকশন অফিসার গ্রেড-২ আনোয়ার হোসাইন, অফিস সেক্রেটারি মো. মতিন ২০১৯ সালের ২৯ মে মোট ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে নেন।

এ সংক্রান্ত টাকা উত্তোলনের নথিপত্র এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। নথিপত্র ঘেটে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ১৪ জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ২৯ মে পর্যন্ত ফোন কল ভাতা ও যোগাযোগ ভাতা বাবদ এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নিয়েছেন তারা। এর মধ্যে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান নিয়েছেন ১ লাখ টাকা, সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া নিয়েছেন ৯০ হাজার টাকা, সাবেক রেজিস্ট্রার  প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান নিয়েছেন ৮০ হাজার টাকা, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (সংস্থাপন) মোহাম্মদ জাহিদ আলম নিয়েছেন ৭০ হাজার টাকা, সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেন সরকার নিয়েছেন ৬০ হাজার টাকা, সেই সময়ের সেকশন অফিসার গ্রেড-২ আনোয়ার হোসাইন নিয়েছেন ২০ হাজার টাকা, অফিস সেক্রেটারি মো. মতিন নিয়েছেন ৩৫ হাজার টাকা।

এদিকে ফোন কল ও যোগাযোগ সম্মানী বাবদ বিপুল অংকের এই টাকা উত্তোলন করে নেওয়া হলেও তা অনিয়মের মাধ্যমে করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়মে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাহিদ আলম। তিনি অধ্যাপক মীজানুরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। সংস্থাপন শাখার দায়িত্বে থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, পদোন্নতিতে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

এবার বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সংস্থাপন) আবদুল হালিমের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ থেকে পরবর্তী উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকায় তার নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব না পাওয়ায় আইন অনুযায়ী তিনিও কাউকে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন না।

বর্তমান কোষাধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির চৌধুরী সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন বলে জানা গেছে। মোহাম্মদ জাহিদ আলমও অধ্যাপক মীজানুরের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় জাহিদ আলমকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ জাহিদ আলম বলেন, “ফোন কল বাবদ সম্মানী হিসেবে টাকা উত্তোলন করে নেওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। এসব বিষয়ে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলতে হবে। আপনি একসময় এসে দেখা করলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, “এসব অভিযোগ তো তদন্ত করে দেখতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাকে শোকজ করতে হবে, ফাইল ঘেঁটে দেখতে হবে। এখন এই জরুরি অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর জন্য একজন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নিয়োগ জরুরি। তিনিই সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা, সেজন্য তাকে পরবর্তী উপাচার্য দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার কোষাধ্যক্ষের আছে কি না জানতে চাইলে, তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

Link copied!