জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের আটকে রেখে নির্যাতনের অন্যতম কুশীলব, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনিরের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও হয়রানি, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা-হুমকির অভিযোগে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পে লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ তুলে তা সুষ্ঠু তদন্ত করে তার উপযুক্ত বিচারের দাবিও জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের এক বৈঠকে এই দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রিপন-সাঈদ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিজেকে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের ঘনিষ্ঠজন পরিচয় দিয়ে দলীয় প্রভাব কাটিয়ে ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকা তার একটি ছবি দেখিয়ে ক্যাম্পাসের আশপাশের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে কাজী মনিরের বিরুদ্ধে। প্রক্টর দপ্তরে কর্মকর্তা থাকাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে নির্যাতন ও হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তার নেতৃত্বে অসংখ্য কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, হুমকি-ধমকিসহ কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়া করার অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০১৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রক্টর অফিসে ধরে নিয়ে নির্যাতন করতেন কাজী মনির। তার দুর্নীতি, অপকর্ম নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ হলেও প্রতিবারই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা না নিয়ে নিষ্ক্রিয় থেকেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও শিক্ষকের ছত্রচ্ছায়ায় কাজী মনির এসব অপকর্ম করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও হল আন্দোলনের নেতা সাজ্জাদ হোসেন মুন্না অভিযোগ করে বলেন, “২০১৬ সালে হল আন্দোলনের সময় কাজী মনির আমাকে ক্যাম্পাসে সবার সামনে গলা চেপে ধরেছিল। পরে প্রক্টর অফিসে ধরে নিয়ে হয়রানি করে। সেই সময় অনেক শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে। ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনেও সে শিক্ষার্থীদের হমকি-ধমকি দিয়েছিল। এবার আমাদের ওপর হামলাও করতে এসেছিল এবং আমাদের ক্যাম্পাস ছাড়া করার হুমকিও দিয়েছে।”
এদিকে আব্দুল কাদের ওরফে কাজী মনির ও তার সহযোগী অন্যান্য কর্মকর্তা গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর আত্মগোপনে চলে গেছেন। এরপর আর ক্যাম্পাসেও দেখা যায়নি তাদের। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও কাজী মনির ও তার সহযোগীরা ক্যাম্পাসেও আসছেন না।