স্থানীয়দের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে চোখে আঘাত পেয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা ছিলো বেশ গুরুতর। সারা জীবনের জন্য চোখ হারানোর শঙ্কা তৈরি হলে তাদের রাজশাহী থেকে পাঠানো হয় ঢাকায়। এতেও কাজ না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
ঘটনার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও তারা কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি। খোঁজ রাখেনি বিদ্যালয়ের প্রশাসনও। এমনটাই অভিযোগ করেছেন এই তিন শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী এই তিন শিক্ষার্থী হলেন আলিমুল ইসলাম, মেজবাহুল ইসলাম ও আল-আমিন হোসেন। এদের মধ্যে ধারদেনা করে মিসবাহুলের পরিবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে একাধিকবার উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন মেজবাহুল। কিন্তু উপাচার্য কোনো ধরনের সারা দেননি বলে অভিযোগ করেছেন এই শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী ও 1ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় বিনোদপুর বাজারে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় চোখে গুলি লাগে আল-আমিন, মেজবাহুল ইসলাম এবং আলিমুল ইসলামের। পরে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ও ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট চিকিৎসা দেওয়া হয়। চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে তাদের ভারতের চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে মেজবাহুল ইসলাম ও আলিমুল ইতোমধ্যে শঙ্কর নেত্রালয় থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু আল-আমিন এখনো অর্থাভাবে যেতে পারেননি সেখানে।
ভারতের চেন্নাই থেকে চিকিৎসা নেন ফারসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেজবাহুল ইসলাম। চোখের অবস্থা কেমন জানতে চাইলে মেজবাহুল বলেন, “চোখের অবস্থা খুব বেশি ভালো না। বাম চোখে এখন ঝাপসা দেখি। গত ৩১ মার্চ চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে যাওয়ার পর আমার ডান চোখে অপারেশন চলে। অপারেশনে প্রায় ৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে কোনো উন্নতি হচ্ছে না। এ ২৯ মে যাওয়া লাগবে। তারপরও আরেকবার যেতে হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।”
প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ঢাকায় চিকিৎসার সময় আট হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা হলেও ভারতে যেতে প্রশাসন আমাদের কোনো ধরনের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেনি। এমনকি আমাদের কোনো ধরনের খোঁজখবরও রাখেনি। ভারতে যাওয়ার আগে ভিসি স্যার বলেছিলেন সেখানে গিয়ে যেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। ভারতে গিয়ে ভিসি স্যারকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করলেও তিনি কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। তবে প্রশাসন বলেছে চিকিৎসার কাগজপত্র জমা দিলে তবেই আর্থিক বিষয় দেখা হবে।”
পুলিশের গুলিতে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী আলিমুল ইসলাম ভারতে চিকিৎসার পরও বাঁ চোখ হারিয়েছেন। আলিমুল মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, “আমি ১৭ এপ্রিল ভারতের চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়ে যাই। সেখান থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে আসি ২৪ এপ্রিল। আমার চিকিৎসা বাবদ এক লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। কিন্তু চোখ ঠিক হয়নি। বাঁ চোখটা একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে।”
প্রশাসনের সহযোগিতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করেনি। আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করেনি। আমাদেরই বারবার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়েছে। তারপরেও আর্থিক সহযোগিতা পাইনি।”
এদিকে অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে ভারতে যেতে পারেননি আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন। বর্তমানে তিনি ডান চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। আল-আমিন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে চিকিৎসা নেওয়ার পর কাগজপত্র জমা দিলে টাকা দেবেন। কিন্তু ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করার মতো টাকা আমার পরিবারের নেই। আমার বাবা একজন ইলেকট্রিশিয়ান। তিনি এত টাকা ম্যানেজ করতে পারবেন না। যাবো কীভাবে?”
শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, “তাদের তিনজনের মধ্যে দুজনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মেজবাহুলকে বলা হয়েছে তার চিকিৎসার খরচের বিষয়ের সবি কাগজপত্র ইন্সুরেন্সে সেলে জমা দেওয়ার জন্য। আর আল-আমিনকে ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য একটা আবেদন দিতে বলা হয়েছে।”
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, “আল-আমিন নামের ওই শিক্ষার্থী বিভাগের সভাপতিকে নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। তাদের যেহেতু কথা দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে। তবে বিষয়টি প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর দেখভাল করছে। তাদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়ে জানাচ্ছি।”