দেশজুড়ে চলছে শীতের দাপট। দেশের কোনো কোনো জেলায় তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো জেলার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রণালয় থেকেও একই নির্দেশনা রয়েছে।
এমন নির্দেশনা মেনে দেশের কয়েকটি জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে রাজধানী ঢাকায় শীতের তীব্রতা থাকলেও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না নামায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাই থাকছে। শীতের সঙ্গে রাজধানীতে রয়েছে বায়ুদূষণও। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি। সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা।
নগরীর সরকারি বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বলছেন, জানুয়ারি মাসে শীতের প্রকোপ বাড়ায় বন্ধ করা উচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর বেসরকারি বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা চান, ক্লাসের সময়টা পিছিয়ে দেওয়া হোক। নয়তো সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করা হোক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) নগরীর মোহাম্মদ এলাকার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, শীতের প্রকোপ বাড়ায় বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণিকক্ষের জানালা বন্ধ করে পাঠদান কার্যক্রম চলছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার বেশি থাকলেও সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিতির হার ছিল কম।
মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কথা হয় আকলিমা নামের এক অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি বাচ্চার অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “ঠান্ডার কারণে বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হচ্ছে। এ ছাড়া গলা ব্যথা, জ্বর হওয়ার শঙ্কাও থাকে। এই ঠান্ডা বাচ্চাদের জন্য খুবই কষ্টকর। সকালে স্কুলে নিয়ে আসার সময় হাতের হাত-পা বরফ হয়ে যায়।”
শিউলি নামের আরেক অভিভাবক বলেন, “আমার বাচ্চাটার তিন দিন ধরে জ্বর। আজকে তার জ্বর কমলেও, গলা বসে গেছে। জ্বর কমে যাওয়ায় আজকে স্কুলে নিয়ে আসছি। শীতের কারণে স্কুল বন্ধ দিলে ভালো হয়।”
ওয়াইডাব্লিউসিএ জুনিয়র হাই স্কুলে পড়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শামীমা সুলতানা বলেন, “সকালের অনেক কুয়াশা থাকে। বাচ্চারা উঠতে চায় না। বড়দের অবস্থাই তো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আর তারা (শিক্ষার্থী) তো ছোট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জানুয়ারি মাসে বন্ধ করা উচিত। নয়তো ১০টা থেকে স্কুল দিলে সুবিধা হয়।”
মেঘলা নামের আরেক অভিভাবক বলেন, “শীতের মাত্রা অনুযায়ী স্কুল অবশ্যই বন্ধ করা জরুরি। বাচ্চাদের ঠান্ডা জনিত সমস্যা অনেক ক্ষতি করে। আমার বাচ্চার তো ঠান্ডা লেগেছে।”
মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি শিক্ষিকা খাইরুন নাহার লিপি বলেন, “শৈত্যপ্রবাহের কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির সংখ্যা একটু কম। কয়েকদিন আগে যখন সকালের দিকে স্কুলে শুরু হচ্ছিল, তখন অভিভাবকদের মধ্যে এক প্রকার অনীহা লক্ষ্য করেছি আমরা। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের গরম কাপড়ের সঙ্গে সঙ্গে বাইরের ঠান্ডা যাতে ভেতরে না আসে, এ কারণে শ্রেণিকক্ষের জানালা বন্ধ করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।”
ওয়াইডাব্লিউসিএ জুনিয়র হাই স্কুলের অফিস সহকারী অর্পা বিশ্বাস বলেন, “শিশুদের মন কোমল হওয়ায়, তারা যদি একদিন স্কুলে না আসে তবে তাদের মনে কষ্ট থেকে যায়। তাছাড়া সামনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে খেলার আয়োজন করা হয়েছে। তাদের গ্রুপ ভাগ করা হচ্ছে। এ কারণে প্রায় ৮৫ শতাংশ বাচ্চা আমাদের উপস্থিত থাকে। আমাদের দুটো শিফট। একটা সকালে বসে, আরেকটা বসে ১১টায়। ১১টার শিডিউল শেষ হতে হতে বিকেল ৪টা বাজে। এখন যদি আমরা শিডিউল পিছিয়ে দেই তবে ডে শিফট শেষ হতে হতে ৫টা বাজবে। যে কারণে শিডিউল আমরা পেছাতে পারছি না।”
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমাদের মন্ত্রণালয়ের এখন পর্যন্ত কোনো আইন নেই। তবে গেজেট করা হয়েছে। গেজেটে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে। এটি কার্যকর হলে আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো। তবে বর্তমানে শীত কেন্দ্রিক সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারাও (বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) পারতেন এ নির্দেশনা মানতে। এতে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো হতো।”