• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

টিউশনি না পেয়ে ভিন্ন উদ্যোগ, সাত শিক্ষার্থীর ‘সাধের বাজার’


সৈয়দ সাকিব, রাবি
প্রকাশিত: এপ্রিল ১, ২০২৩, ০৯:১৭ এএম
টিউশনি না পেয়ে ভিন্ন উদ্যোগ, সাত শিক্ষার্থীর ‘সাধের বাজার’

দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল অবস্থায় পড়েছে দেশের জনগণ। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝেও। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের একটু স্বস্তি দিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থী মিলে তৈরি করেছেন ‘সাধের বাজার’। মোবাইল ফোনে অর্ডার করলেই রান্নার প্রয়োজনীয় সামগ্রী আবাসিক হল কিংবা মেসের রুমে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।

সাধের বাজারের উদ্যোক্তারা হলেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, রাব্বি হাসান রাজন, রিফাত আলী, আরিফ হোসেন, আবু সুফিয়ান, শাহীন আলম ও সুদিপ্ত কুমার সরকার। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা করেই তাদের এই উদ্যোগ। মাত্র ৭০০ টাকার মূলধন নিয়ে ‘সাধের বাজার’ এর যাত্রা শুরু হয়। অল্পদিনে সাধের বাজার সাড়াও পেয়েছে অনেক। ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনায়াসে অর্ডার করতে পারবেন যে কেউ। হল অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ভোক্তার কাছে অর্ডারকৃত পণ্য পৌঁছে দেওয়াসহ ক্যাম্পাসে সম্পূর্ণ ফ্রি ডেলিভারিও দিয়ে থাকেন তারা।

বর্তমানে সাধের বাজারের তিন ধরনের প্যাকেজ চালু আছে। মুরগির মাংসের প্যাকেজ, মাছের প্যাকেজ, স্পেশাল খিচুড়ির প্যাকেজ। প্রতিটি প্যাকেজে রয়েছে রান্নার যাবতীয় উপকরণ। এছাড়াও সর্বনিম্ন ২০০ গ্রাম মুরগির মাংস, ২৫০ গ্রাম গরুর মাংস, ৩ টুকরো মাছসহ যেকোনো পরিমাণ কাচা সবজি পাওয়া যায় তাদের কাছে। তারা দিনে দুইবার বাজার করে। সেই সঙ্গে সবকিছু ফ্রেশ ডেলিভারি দেন। বর্তমানে রমজান উপলক্ষ্যে দুপুর ১টার আগে অর্ডার নেন এবং বিকাল চারটার পরে ডেলিভারি দেন এই উদ্যোক্তারা।

এই উদ্যোগ সম্পর্কে শাহীন আলম বলেন, “রাজশাহীতে টিউশন পাওয়া খুব কষ্টকর। বলতে গেলে, পাওয়াই যায় না। তাই বিকল্প কিছু করার চিন্তা করছিলাম। অনেকদিন আগে থেকেই আমাদের মধ্যে এসব নিয়ে কথা হচ্ছিল। শুরুর অনেক আগে থেকে আমরা বাজার যাচাই, গবেষণা, জরিপ করেছি। সবক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। মাত্র ৭০০ টাকার মূলধন নিয়ে আমাদের ‘সাধের বাজার’ এর যাত্রা শুরু হয়। মাত্র ১০ দিনে আমরা দুই হাজার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি।”

সুদিপ্ত কুমার সরকার বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত ডাইনিং-ক্যান্টিনের একই মেন্যুর খাবার খেতে খেতে বিরক্ত। মাঝেমধ্যে ইচ্ছা করত, রান্না করে খাই। কিন্তু বাজার গেলে বাধে যত বিপত্তি। এক বেলার রান্নার জন্য ২০০ গ্রাম মুরগি, ৩-৪ টুকরো মাছ, ১০ টাকার তেল, ৫ টাকার আদা-রসুন, ৫ টাকার পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দোকানির চোখ রাঙানো দেখতে হয়। তাছাড়া একবেলা রান্নার জন্য আস্ত মুরগি কেনাও সম্ভব হয় না। এই সমস্যা শুধু আমার না অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। শিক্ষার্থী ও নিজের সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে লাগলাম। তখন মাথায় আসে যদি একবেলা রান্নার প্রয়োজনীয় প্যাকেজ করা যায় তাহলে কেমন হয়। সেই থেকে যাত্রা শুরু সাধের বাজারের। এভাবে নিজেদের কিছু রোজগারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয়েছি।”

সাধের বাজারে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রাব্বী হাসান রাজন বলেন, “সাধের বাজার এখন শুধু সবজি, মাছ এবং মাংস পৌঁছে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে এর প্রসার বাড়তে থাকবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে গ্রীষ্মকালীন ফল যেমন রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর আম ও দিনাজপুরের লিচু সরবরাহ করবে।”

ক্যাম্পাসে ভিন্নধর্মী এই উদ্যোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, “এই উদ্যোগটিকে আমি সাধুবাদ জানাই। এতে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি দূর হচ্ছে, পাশাপাশি তারা কিছুটা অর্থও উপার্জন করতে পারছে। আমি আশা করি, উদ্যোক্তারা ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু করবে।”

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর

Link copied!