• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দক্ষিণ এশিয়াতে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ


সাগর শুভ্র, শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৪, ০৩:৩০ পিএম
দক্ষিণ এশিয়াতে বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ

দক্ষিণ এশিয়া পৃথিবীর একটি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। বিশ্বের অন্যান্য এলাকার চেয়ে এখানে বায়ুদূষণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের একটি জার্নালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ুদুষণ বিষয়ক গাইডলাইন ২০২১-এর বিপরীতে বাংলাদেশি একদল গবেষকের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার  আটটি দেশে বায়ুদূষণের মাত্রা ও এর প্রতিকারের বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

সুইজারল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব পাবলিক হেলথে ‘আর্জেন্ট কল টু এনসিওর ক্লিন এয়ার ইন সাউথ এশিয়া- এ গ্রোয়িং বাট নেগলেক্টেট পাবলিক হেলথ ইমারজেন্সি’ শিরোনামে গত ৩০ জুন ২০২৪ এ গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। 

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) বায়োস্ট্যাটিসটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মেসবাহউর রহমানের তত্ত্বাবধানে এ গবেষণায় কাজ করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ডা. শুভজিত কুমার কুন্ডু, বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত জাকি ফারহানা ও  তুরস্কের ইস্তাম্বুল গেলিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অ্যান্টন আব্দুলবাসাহ্ কামিল।

গবেষণার বিষয়ে মোহাম্মদ মেসবাহউর রহমান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে বাংলাদেশে বাতাসে দুষণের মাত্রা কতটা ভয়াবহ আমাদের গবেষণায় এটি উঠে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী যেখানে বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের নিচে বা সমান থাকতে হবে, সেখানে গতবছর অর্থাৎ ২০২৩ সাল জুড়ে বাংলাদেশের বাতাসে এই অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার মাত্রা ছিল প্রায় ৮০। যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে প্রায় ষোলগুণ বেশি এবং দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। এই দুষণে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত। অপরদিকে মালদ্বীপ যেটি কিনা একটি সমুদ্রবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটনস্থল সেখানে প্রতি ঘনমিটারে এই অতিক্ষুদ্রবস্তুকণার পরিমাণ ১৫ মাইক্রোগ্রাম।

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় আগে থেকেই অপেক্ষাকৃত নিম্ন আর্থসামাজিক মানুষের বসতি তুলনামূলক বেশি। বাতাসে এই অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি নতুন অ্যাজমা, শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদী রোগ ও  তীব্র সংক্রমণ, ফুসফুসের ক্যান্সার, স্ট্রোক, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, স্মৃতিভ্রংশ ও মানসিক সমস্যার কারণ হতে পারে। ইউরোপে ২০২১ সালে বাতাসে বিদ্যমান এই অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা জনিত বায়ুদূষণের কারণে চার লক্ষ বত্রিশ হাজার মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, অতিক্ষুদ্রকণাজনিত বায়ু দুষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চললে যেকোনো দেশের গড় আয়ু আরো ৫.৪ বছর বেড়ে যেত।

এ গবেষক বলেন, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পরিমাপক সংস্থা আইকিউ এয়ারের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দূষিত বায়ুর তালিকার শীর্ষে থাকা ৫০টি শহরের মধ্যে ৪২টিই দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত। এইসব এলাকায় বসবাসকারী ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন শিশু, বয়স্ক মানুষ ও দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভোগা মানুষ, গর্ভবতী নারীর জন্য এই দূষিত বাতাসে শ্বাস নেওয়া মারাত্মক পরিণাম ডেকে আনতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার ভৌগলিক অবস্থান, অর্থনীতি এবং জনসংখ্যার প্রকৃতি এই অঞ্চলের বায়ুদূষণজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, বায়ুদূষণে দক্ষিণ এশিয়ার সবকটি দেশই বিপর্যস্ত এবং এটি একটি জনস্বাস্থ্যজনিত জরুরি অবস্থা। এসব দেশে প্রায়শই এটাকে যথেষ্টভাবে গুরুত্বারোপ করা হয় না। এই অঞ্চলে বায়ুদূষণ একটি আঞ্চলিক সমস্যা। তাই এটি মোকাবিলায় পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে দেশগুলো এই ইস্যুতে ফলপ্রসূভাবে তাদের তহবিল ব্যবহার করার মাধ্যমে এবং অর্জিত জ্ঞান বিনিময় ও সবাইকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে এগিয়ে আসতে পারে।

এ গবেষণার মাধ্যমে গবেষকরা ক্রমবর্ধমান জনস্বাস্থ্যজনিত দূর্যোগ মোকাবিলায় তাদের পূর্বপ্রতিশ্রুত আর্থিক অনুদান নিয়ে এগিয়ে আসতে সম্পদশালী দেশগুলির দৃষ্টি আকর্ষণে সচেষ্ট হয়েছেন। একইসাথে বায়ুদূষণের টেকসই নীতিনির্ধারণে দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক অবস্থা, স্থানীয় জলবায়ুর প্রকৃতি, উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ড, সাক্ষরতার হার প্রভৃতি বিষয়কে আমলে নিতে এ অঞ্চলের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
 

Link copied!