বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আঠারো পেরিয়ে উনিশে পদার্পণ করেছে।
কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে লালমাই পাহাড়ের কোল ঘেঁষে কোটবাড়ির সালমানপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান। ৫০ একরের এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রয়েছে চারটি অ্যাকাডেমিক ভবন ও একটি প্রশাসনিক ভবন এবং পাঁচটি হল (ছেলেদের ৩টি ও মেয়েদের দুইটি)। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রয়েছে ২টি ডরমেনটরি এবং বর্তমান ক্যাম্পাসের খুব সন্নিকটে ১৯৪ দশমিক ১৯ একরের জায়গাজুড়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির সম্প্রসারণের কাজ।
২০০৬ সালে ২৮ মে ৭টি বিভাগ, ৩০০ জন শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ১৯টি বিভাগ চালু রয়েছে। যেখানে ৬ হাজার ৯২৪ জন শিক্ষার্থী ও ২৬৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে যথাক্রমে ১০৫ ও ২০৪ জন।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম ছাড়াও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। যারা সারা বছর বিশ্ববিদ্যালয়কে নানা আয়োজনে মুখরিত করে রাখে।
সংগঠনগুলির মধ্যে রয়েছে, নাট্যসংগঠন থিয়েটার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবর্তন, আবৃত্তি সংগঠন অনুপ্রাস কণ্ঠচর্চা কেন্দ্র, প্লাটফর্ম ব্যান্ড, গবেষণাভিত্তিক সংগঠন সায়েন্স ক্লাব, ডিবেটিং সোসাইটি, রক্তদাতা সংগঠন বন্ধু, গ্রাফিটিবিষয়ক সংগঠন বৃত্ত কুবি, প্রকৃতিবিষয়ক সংগঠন অভয়ারণ্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছায়া জাতিসংঘ, রোভার স্কাউট, বিএনসিসিসহ সাংবাদিক সংগঠন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাব ও তরুণ লেখক ফোরাম।
এছাড়াও প্রত্যেক বিভাগেরই রয়েছে নিজস্ব স্বকীয় সংগঠন, যারা সারা বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে পয়লা বৈশাখ, পিঠা উৎসব, বসন্তবরণ, হেমন্ত উৎসবসহ নানান আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়কে মাতিয়ে রাখে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজ উদ্দীন মৃধা বলেন, “বছর ঘুরে আবারও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস চলে এলো। মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক দিন দিন শেষ হয়ে আসছে। হয়তো এমন কোনো একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি মায়া ত্যাগ করে অগ্রজদের মতো আমাদেরও চলে যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় তিন বছরের। এই দীর্ঘ সময়ে আমি অনেক নিত্যনতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, সামনের দিনগুলোতে এই অভিজ্ঞতাগুলো সবথেকে বেশি কাজে দেবে। আমি চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আবারও শান্ত হয়ে আসুক। স্বাভাবিক হয়ে উঠুক আমার প্রাণের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।”
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আমাদের বিগত বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও অ্যাকাডেমিক শ্রেষ্ঠত্বের শুধু যোগফলই নয় বরং আমাদের শিক্ষার্থী, অনুষদ এবং সকলের সম্মিলিত ত্যাগ, প্রচেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমের প্রামাণিক দলিল। এটি আমাদের অতীতের সামগ্রিক কাজের অগ্রগতির পর্যালোচনা, মূল্যায়ন, আশাবাদ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকানোর একটি সুযোগ।”
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯তম বছরে পদার্পণের ভিশন নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, “প্রতি বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে আমরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করে থাকি। এ বছর উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর একটি নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করে আমরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করব। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ হিসেবে শিক্ষার্থীদের মেরিট বৃদ্ধির জন্য ভাইস চ্যান্সেলর স্কলারশিপ অ্যাওয়ার্ড চালু করেছি। উন্নত মানের শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছি। গবেষণা করার সময় ভাবতে হবে, তা যেন দেশ ও মানুষের কল্যাণে আসে। বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যম হল গবেষণা।”
উপাচার্য আরও বলেন, “হাইকোয়ালিটির জার্নালে নতুন নতুন আর্টিকেল পাবলিশ করলে নতুন জ্ঞান তৈরি হবে। গবেষণালব্ধ জ্ঞান শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে হবে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের যে সুনাম সৃষ্টি হচ্ছে তা যেন অব্যাহত থাকে, সেজন্য কোয়ালিটি এডুকেশন এবং কোয়ালিটি রিসার্চের গুণগত মানের প্রতি ফোকাস দিচ্ছি। আমাদের যে ভিশন তৈরি হয়েছে, তা নিয়েই এগিয়ে যাব।”