শীতের সকালে পায়েস, খিচুড়ি, পিঠা, পাকোড়া কিংবা হালুয়া যেন এক ধরনের অমৃত খাবার। একটু অন্য মনস্ক হলেই প্লেট থেকে এই খাবারগুলো হাওয়া। এই রকম ঘটনা হরহামেশাই ঘটে গ্রাম, শহর এবং বন্ধুবান্ধবের আড্ডায়। তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কেউ এসব খাবার থেকে দূরে থাকেন। এই সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক দল রঙিন চাল নিয়ে গবেষণা করে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই চাল শুধু পুষ্টি গুণেও সমৃদ্ধ নয়, বরং ডায়াবেটিস, ক্যানসার এবং নারীদের লৌহ অভাব জনিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
এ ছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আঁশ, আয়রন এবং ভিটামিন ‘বি’ রয়েছে। রঙিন চালে অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। যা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এ ছাড়া ত্রিট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও বেশ কার্যকর।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বাকৃবির ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির। সহযোগী গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন-২, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস এবং সাগরিকা খাতুন। তিন বছর ধরে চলা এই গবেষণায় তারা উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, কালো চালের জিংক এবং আয়রনের পরিমাণ সাদা চালের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি। এ চালে প্রতি গ্রামে ১১-৭০ মিলিগ্রাম অ্যান্থোসায়ানিন এবং ৭-১০ মিলিগ্রাম ফেনল রয়েছে, যা সাদা চালে নগন্য পরিমাণে বিদ্যমান। এতে ফ্লাভোনয়েডের পরিমাণ প্রতি গ্রামে ৫-৬ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম, যেখানে সাদা চালে তা মাত্র ৩-৪ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. ছোলায়মান আলী জানান, গবেষণার জন্য ৩৩টি রঙিন জাত বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এরপর ১১টি জিনোটাইপ বাছাই করা হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ও অধিক উৎপাদনশীল। রঙিন চাল লাল, কালো, বাদামি বা বেগুনি রঙের হতে পারে। এর চাষ পদ্ধতি প্রচলিত ধানের মতোই। এটি আমন ও বোরো উভয় মৌসুমে চাষের উপযোগী এবং সব ধরনের জমিতে ভালো ফলন দেয়। সঠিক পরিচর্যা ও সার ব্যবহারে প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত ফলন সম্ভব।
ছোলায়মান আলী বলেন, “সাদা চালের তুলনায় রঙিন চালের ফলন কিছুটা কম হলেও এর বাজারমূল্য অনেক বেশি। তবে এটি পাখি এবং রোগবালাইয়ের প্রতি কিছুটা সংবেদনশীল। এ কারণে উন্নত জাত উদ্ভাবন এবং আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা গ্রহণ জরুরি।”
সহযোগী গবেষক অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন-২ জানান, রঙিন চালের পুষ্টিগুণ মূলত বাইরের আবরণে থাকে। সাধারণ মিলে ছাঁটাইয়ের ফলে এর পুষ্টিগুণ কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে ঢেকির মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করলে এর পুষ্টিগুণ প্রায় অক্ষুণ্ন থাকে।