• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঢাবিতে ছাত্ররাজনীতি ‘নিষিদ্ধ’ চান প্রায় ৮৪ ভাগ শিক্ষার্থী


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪, ০৮:১৭ পিএম
ঢাবিতে ছাত্ররাজনীতি ‘নিষিদ্ধ’ চান প্রায় ৮৪ ভাগ শিক্ষার্থী
মানববন্ধন। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিয়ে প্রত্যাশায় শতকরা ৮৩ দশমিক ৮ ভাগ শিক্ষার্থী একেবারেই ‘নিষিদ্ধ’ রূপে প্রত্যাশা করেছেন। সংস্কারকৃতরূপে বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি প্রত্যাশা করেছেন মাত্র ১৬ ভাগ শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি যে অবস্থায় আছে সেই অবস্থায়ই প্রত্যাশা করেছেন মাত্র শূন্য দশমিক ২ ভাগ শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসভিত্তিক বা হলভিত্তিক দলীয় ছাত্ররাজনীতির কমিটি প্রদানকে শতকরা ৯৪ ভাগ শিক্ষার্থীই সমর্থন করেন না।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য উপস্থাপন করে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ’।

গত ৩-১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৮টি বিভাগ ও ১০টি ইনস্টিটিউট থেকে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২৩-২৪ সেশনের মোট ২২৩৭ জন শিক্ষার্থীর মতামতের ভিত্তিতে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটি।

শতকরা ৮৮ ভাগ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতিকে গুরুত্বহীন মনে করেন উল্লেখ করে তারা বলেন, “শতকরার ৯৬ ভাগ শিক্ষার্থী দলীয় ছাত্র-রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন। এর বিপরীতে শতকরা ৩ ভাগ শিক্ষার্থী দলীয় ছাত্র ও রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন। শতকরা ১ ভাগ শিক্ষার্থী মনে করেন দলীয় ছাত্ররাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।”

সংগঠনটির সদস্যরা বলেন, “দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের বিকল্প হিসেবে শতকরা ৮১ দশমিক ৯ ভাগ শিক্ষার্থী নিয়মিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন।”

তাদের দাবি, শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতির মূল প্রভাব হিসেবে শতকরা ৮৭ দশমিক ৫ ভাগ শিক্ষার্থী ক্ষমতার অপব্যবহারকে উল্লেখ করেছেন।

সংগঠন থেকে বলা হয়, শতকরা ৮৭ দশমিক ৩ ভাগ শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ, শতকরা ৮৪ দশমিক ৭ ভাগ শিক্ষার্থী ভয়ংকর গেস্টরুম কালচার, ৭৭ দশমিক ২ ভাগ শিক্ষার্থী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত সহিংসতা, ৭৪ দশমিক ১ ভাগ শিক্ষার্থী দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ৬৮ দশমিক ৮ ভাগ শিক্ষার্থী নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থতা, ৬৮ দশমিক ৭ ভাগ শিক্ষার্থী জাতীয় রাজনৈতিক দলের প্রভাব, ১১ দশমিক ৪৫ ভাগ শিক্ষার্থী নেতৃত্বে সুযোগ সৃষ্টি, ৪ দশমিক ৬ ভাগ শিক্ষার্থী ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি এবং ৪ দশমিক ৫ ভাগ শিক্ষার্থী অন্যান্য প্রভাব উল্লেখ করেছেন।

দলীয় ছাত্ররাজনীতি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে শতকরা ৮৬ ভাগ শিক্ষার্থী অসন্তষ্ট ও শতকরা ৩ ভাগ শিক্ষার্থী সন্তুষ্ট উল্লেখ করে তারা বলেন, “শতকরা ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় দলীয় ছাত্ররাজনীতির সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং সমর্থন করেন না এবং শতকরা ৮১ ভাগ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমের কারণে তাদের শিক্ষা জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মতপ্রকাশ করেছেন।”

আলোচ্য গবেষণা জরিপের ফলাফল অনুযায়ী তারা ৪ দফা সুপারিশ করেছেন। সেগুলো হলো,
১. দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধকরণ : অধিকাংশ শিক্ষার্থী (৮৪ ভাগ) বিশ্ববিদ্যালয় দলীয় ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার পক্ষে মতামত প্রকাশ করেছেন এবং শতকরা ৯৬ ভাগ শিক্ষার্থী মনে করেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

২. ডাকসু পুনর্জীবিত ও সংস্কার : একটি স্বচ্ছ শিক্ষার্থীবান্ধব এবং জবাবদিহিতামূলক ছাত্র সংসদ তথা ডাকসু শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত রাখতে এবং তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরার একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করতে পারে এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে গণতান্ত্রিক চর্চার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে।

৩. শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন কমিটি গঠন : শিক্ষার মান উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং ব্যক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়ন কমিটি গঠনের পাশাপাশি নিয়মিত ছাত্র-শিক্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা যেতে পারে।

৪. শিক্ষা ও গবেষণার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা : শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা, গবেষণা, শিল্প সাহিত্যচর্চা এবং মেধাবিকাশের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে দেখতে চান। তাদের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় ছাত্র রাজনীতি ও এর কার্যক্রম শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করে এবং শিক্ষার্থীদের মূল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

Link copied!