• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার জীবন হুমকির মুখে’


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৮, ২০২৪, ০৪:৪১ পিএম
‘শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমার জীবন হুমকির মুখে’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) অবন্তিকার আত্মহত্যার পর থেকেই আন্দোলন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (১৭ মার্চ) ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার পেছনে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে সহপাঠীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

চলমান এই আন্দোলনের মধ্যে বিভিন্ন সময় নিজেদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মিম। তিনি অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অকার্যকর রয়েছে নিপীড়ণবিরোধী সেল।

নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্খিত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, “আমি শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি না হাওয়ায় আমার জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। ভয়ভীতির মুখে পড়েছি। আমাকে পুরো একা করে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা দিলেও ফেল করানো হচ্ছে। আমি যখন অভিযোগ করি তখন কোনো সেল ছিল না। এজন্য আমাকে ভিসি স্যার বরাবর অভিযোগ করতে হয়। এরপর আমার বিরুদ্ধে প্রেশার আসে। যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সে আমার বাড়িতে পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। বাবা-মা অসুস্থ, তাদের ওপর প্রেশার দেওয়া হয়েছে অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য। আমি অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় বিভাগে কোনো মহিলা শিক্ষক না থাকা সত্ত্বেও দরজা আটকে জোর-জবরদস্তি করা হয়েছে আমার সঙ্গে।”

মিম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে বলা হয়েছে, আমার পক্ষে যেন কোনো নিউজ না হয়। মেয়েটি (অবন্তিকা) সাহসী বলে মারা গিয়েছে। আমি সাহসী না বলে মারা যাইনি। হয়তো এরপর আমি মারা যাব। আমার ক্লাসমেটটরা আমার সঙ্গে মিশতে ভয় পায়। আমি দুই বছর ধরে একা। আমার সামনে দিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় অভিযুক্ত শিক্ষক। আমার শিক্ষকরা আমার অ্যাসাইন্টমেন্ট নিতে চান না। আমাকে দুই সেমিস্টারে ফেল করানো হয়েছে। ফাইনাল ইয়ারে ভাইবায় ফেল করানো হয়েছে। আমি নন-পলিটিক্যাল শিক্ষার্থী।”

মিম আরও বলেন, “আমি শিক্ষকের কুপ্রস্তাবে রাজি হইনি, এটাই আমার অন্যায়। এর আগে ইনকোর্স পরীক্ষায় আমাকে ৪০ এ ০ (শুন্য) দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান স্যার আমাকে ১০০তে ৩ দিয়েছেন। আমি যে বেঁচে আছি, এটা খোদা আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমার বাবাকে বলা হয়েছিল বিভাগ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এই একটা শিক্ষার্থীর জন্য ক্লাসের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।”

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিম বলেন, “তিনি এখনো বহাল আছেন। তিনি আমাকে কাজের জন্য তার অফিস রুমে ডেকে নিয়ে হ্যারাজ করেন। এটা নিয়ে আমি অনেক দিন ধরেই ভুগছি। যখন আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, আমাকে প্রতিনিয়ত ফেল করানো হচ্ছে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু বলা হচ্ছে, আমার বাবাকে বলা হয়েছে, ‘আপনার মেয়েকে বহিষ্কার করে দেব’।”

ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, “নতুন করে যে কমিটি করা হয় তার সদস্য ভিসি সাদেকা হালিম ম্যাডাম। তিনি অনেক নারীবান্ধব। কিন্তু ম্যাডামের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও আমি এখন পর্যন্ত বিচার পেলাম না। কয়েক দফা রিপোর্ট আসা সত্ত্বেও অভিযুক্ত শিক্ষক আবু শাহেদ ইমন সুপ্রিম কোর্টে রিট করেছেন। একজন শিক্ষক কতটা বেহায়া হলে নিজের দোষ ঢাকতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায়। সুপ্রিম কোর্ট থেকেও হেরে গেছেন।”

মিম বলেন, “আমি সারাক্ষণ অনিরাপত্তায় ভুগি। আমার পরিবার অনিরাপত্তায় ভোগে। কিন্তু যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে না বা প্রকাশ করছে না, তারাও যে নিরাপদ বিষয়টা তেমন না। একজন শিক্ষার্থী যখন যৌন হয়রানির অভিযোগ দেয়, তখন তার চরিত্র নিয়ে যেসব কথা বলা হয় তা প্রকাশ করা যায় না। আমার বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে যখনই কেউ কথা বলেন, তখনই আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেন।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “যে রিট করেছিল কোর্ট সেটা খারিজ করে দিয়েছেন। পরিতাপের বিষয় ফারজানা মিমের চেয়ারম্যানের পরীক্ষায় সে ফেল করেছে। মিম গ্রেড শিট নিয়ে দেখা করেছে। আমরা গ্রেড শিট নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে মিটিং করব। ফারজানা মিমের প্রতিটি বিষয় আমরা দেখব।”

Link copied!