বিদ্যালয় ছুটির পর নিজের দুই সন্তানকে নিতে এসেছেন কাজল সাহা নামের এক নারী। মীনা-রাজু কার্টুন চরিত্র নিয়ে কথা হয় এই নারীর সঙ্গে। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “শৈশবে মীনা কার্টুন বিটিভি (বাংলাদেশ টেলিভিশন)’তে দেখেছি। অনেক শিক্ষণীয় একটি কার্টুন। এখন যেসব কার্টুন টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচার হচ্ছে, তাতে শেখার বিষয় নেই বললেই চলে। এতে করে এখনকার ছেলে মেয়েরা মীনা কার্টুন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সমাজে নারী-পুরুষের সমতা ফিরলেও, মীনা কার্টুনের গুরুত্ব শেষ হয়নি। এর গুরুত্ব থাকবেই।”
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় কথা হয় কাজল সাহার সঙ্গে। তিনি পার্শ্ববর্তী মণিপুরি এলাকার বাসিন্দা। আলাপের এক পর্যায়ে এই নারী, মীনা কার্টুনের শিক্ষণীয় বিষয়ের গুরুত্ব উল্লেখ করে, সকল টিভি চ্যানেল এবং অনলাইনে বেশি বেশি মীনা কার্টুন প্রচারের দাবি জানিয়েছেন।
মীনা মূলত একটি অ্যানিমেশন কার্টুন। জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি শিশুদের শিক্ষার আলোয় গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই ধারাবাহিকটি নির্মিত হয়। এতে সহায়তা করে ইউনিসেফ (ইউনাইটেড নেশন ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস ইমার্জেন্সি ফান্ড বা জাতিসংঘ জরুরি শিশু তহবিল)। শুরুর দিকে ১৩টি পর্ব নিয়ে শুরু হয় মীনা কার্টুনের যাত্রা।
অপরদিকে, শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিতকরণ ও ঝরে পড়া রোধের অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৯৮ সালে ২৪ সেপ্টেম্বর মীনা দিবস ঘোষণা করে ইউনিসেফ। এরপর থেকে প্রতিবছর দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে মীন দিবস হিসেবে দিনটি উদযাপিত হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় কথা হয় কাজল সাহার মতো কিছু অভিভাবক ও শিশুর সঙ্গে। এতে দেখা যায়, অনেক শিশু এই কার্টুন চরিত্র সম্পর্কে কিছুই জানে না।
অভিভাবকদের মতে, বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা মোবাইল গেমসে এবং হাস্যরসের কার্টুনেই বেশি আসক্ত। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র অর্ণব চন্দ্র শীল বলে, “আমি টোম এন্ড জেরি, ডোরেমন কার্টুন দেখি। মীনা কার্টুন সম্পর্কে জানি না। শুনিওনি কখনো। আজকে গিয়ে সার্চ দিব।”
পাশেই বসে ছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শাকিন, “অনেক আগে মুরগি চুরির গল্প নিয়ে মীনা কার্টুন দেখছি। এখন তো টিভি চ্যানেলে দেখি না। মুরগি চুরির গল্পে মীনাকে দেখেছি মুরগি গুনে গুনে (গণনা) রেখে পড়তো। এখন যেসব কার্টুন হয়, সেসব কার্টুনে লাফালাফি বেশি। মীনা কার্টুন হলে অবশ্যই দেখবো। যেহেতু শেখা যাবে।”
সীমু নামের এক অভিভাবক বলেন, “এখনকার ছেলে মেয়েরা বাইরে খেলে না। মোবাইলে গেম খেলে, টিভিতে কার্টুন দেখে। যেসব কার্টুনে শেখার মতো কিছু থাকে না। মীনা কার্টুন দেখলে অন্তত কিছু শিখতে পারবে। পড়ালেখার ও জানার আগ্রহ বাড়বে, যেমন মীনার ছিল। সব টিভি চ্যানেল এবং অনলাইনে প্রতিনিয়ত প্রচার করা হলে ভালো হবে।”