বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) উন্নয়নের নামে ধ্বংস হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ এবং বৃক্ষনিধন। সময় যত গড়াচ্ছে, বৃক্ষ নিধনের তীব্রতা ততই বাড়ছে। অনেকটা বৃক্ষ নিধনের উৎসবে মেতে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিভিন্ন সময়ে পরিবেশ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখন অন্তঃসারশূন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বারের মোড় থেকে সামান্য এগোলেই দেখা যেত নান্দনিক আমবাগান, যা আজ প্রায় মৃতপ্রায়। আমবাগান সংলগ্ন মাঠে ভবন নির্মাণের কারণে গাছের গোড়ায় ফেলা হয়েছে অনুর্বর বালি। এ ছাড়া ছাঁটাই করা হয়েছে গাছের ডালপালা।
আমবাগান ঘুরে দেখা যায়, আমবাগানের দেড় শতাধিক গাছের মধ্যে প্রায় ৩০টি গাছ ছাঁটাই করা হয়েছে, যা এখন মৃত। ধূধূ মরুভূমির মতো এ মাঠের মৃত বৃক্ষগুলো যেন প্রশাসনের নির্মমতার সাক্ষী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশনে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, দোকানপাট স্থানান্তরের নামে গাছ কাটা হচ্ছে। সেখানে কর্মরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ২৩টি বড় কড়ই গাছ কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এসব কোনো একক ঘটনা নয়, এর আগেও সংস্কারের নামে কাটা হয়েছে বহু গাছ। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রথম গেট থেকে আব্দুল জব্বারের মোড় পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা নির্মাণের জন্য কাটা হয়েছে অর্ধশতাধিক বৃক্ষ। জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগ এবং এক্সটেনশন ভবনের সামনে ৪টি রেইনট্রি, ভেটেরিনারি অনুষদের সামনে ৪০ বছরের পুরোনো কৃষ্ণচূড়া, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে দেবদারু, রাবেয়া হলে লতা পারুল, টিএসসির সামনে মে ফ্লাওয়ার, কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে ২টি জারুল এবং কৃষি অর্থনীতি অনুষদের সামনে দুটি গন্ধরাজসহ আরও অনেক বৃক্ষ কেটে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া ড্রেন নির্মাণের নামে লন্ডন ব্রিজের একপাশে কৃষ্ণচূড়া কেটে সাবাড় করা হয়েছে।
বৃক্ষ নিধন বন্ধ করার জন্য গ্রিন বয়েস ২৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। এ ছাড়া পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ ও পরিবেশবাদী সংগঠনের সমম্বয়ে ‘পরিবেশবিষয়ক উপকমিটি’ গঠনের প্রস্তাব করে।
গ্রিন বয়েসের বকুল আলী জানান, দোকানপাট স্থানান্তর এবং সংস্কারের নামে গাছ কাটার কারণে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। পরিবেশ সুরক্ষায় ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টার কাছে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছি। কোথাও গাছ কাটার প্রয়োজন হলে দুই মাস পূর্বে তার এই কমিটিকে জানাবে। তখন কয়েকগুণ গাছ রোপণের পর তা অনুমোদন দেবেন।
বৃক্ষ নিধনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী কাওছার আহম্মেদ মিজান জানান, এই ক্যাম্পাসে ভর্তি হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। কিন্তু নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের কারণে আজ এই সৌন্দর্য অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করা হচ্ছে, বিপরীতে বাকৃবিতে বৃক্ষ নিধনের তোড়জোড় চলছে। এটি সত্যিই বিস্ময়কর এবং দুঃখজনক।
আরেক শিক্ষার্থী মো. রাশেদ হোসাইন বলেন, “বাকৃবির প্রাণশক্তি হচ্ছে বৃক্ষরাজি। শহরের কোথাও ষড়ঋতুর অনুভূতি না পাওয়া গেলেও এই ক্যাম্পাসে তা বিরাজমান। এখানে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে, আর সূর্য অস্ত যায় বৃক্ষের গহ্বরে। তবে অহরহ বৃক্ষ নিধনের কারণে বাকৃবি তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। ক্যাম্পাসের অনেক প্রান্ত এখন মরুভূমির মতো, বিশেষ করে আমবাগান। একসময় সেখানে গেলে প্রাণ জুড়িয়ে যেত। বৃক্ষের গুণাগুণ এখন শুধু পাঠ্যবইয়েই সীমাবদ্ধ, বাস্তবে সবাই স্বার্থের সন্ধান করে। এ বৃক্ষ নিধন বন্ধ করার জন্য সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক জানান, পরিবেশবিষয়ক উপকমিটি গঠনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বৃক্ষনিধন সম্পর্কিত বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।