গরম শুরু না হতেই মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঘিরে ধরে চারপাশ। মশা নিধনে কার্যকরী কোনো উদ্যোগও নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, মশার জন্য রাতের অবস্থা হয়ে উঠছে ভয়াবহ। শুধু রাত নয়, দিনেও কোথাও বসার উপায় নেই মশার উপদ্রবে। হলের কক্ষগুলোতে মশারি বা কয়েল ব্যবহার ছাড়া এক মিনিটও অবস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাকাডেমিক কক্ষগুলোতেও মশার উৎপাত মাত্রা ছাড়িয়েছে।
এই অবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু-একবার ফগার মেশিন ব্যবহার করা ছাড়া দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকটি আবাসিক হলের চারপাশ, বটতলার আশপাশ, টারজান পয়েন্টের দোকানগুলোর পেছনে, পরিবহন চত্বরের দোকানগুলোর পেছনে, ফটকসমূহের দোকানপাটের পাশে, মুরাদ চত্বর, শহীদ মিনারসহ অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোর চারপাশে জমে আছে নানান বর্জ্য। এসব বর্জ্যে ভনভন করছে মশা-মাছি।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনগুলোর নির্মাণসামগ্রী, নির্মানাধীন ভবনগুলোর পাশে খানাখন্দেও জমে থাকা পানিতে মশা বংশবিস্তারের সুযোগ পাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের দ্বিতীয় বর্ষের আবাসিক ছাত্র আনিসুজ্জামান সানি বলেন, “বিকাল হলেই মশার কয়েল জ্বালাতে হচ্ছে। দিনের চেয়ে সন্ধ্যার পর মশার উৎপাত কয়েক গুণ বেশি। মশারি কিংবা কয়েল ছাড়া সন্ধ্যার পর আর কিছু কল্পনাই করা যায় না। টেবিলে বসে যে একটু পড়ব সেই অবস্থাও নেই।”
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দ্বিতীয় বর্ষের আবাসিক ছাত্রী সুরাইয়া ইয়াসমিন বলেন, “দিনদিন মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে। বিকালের পর বাইরেও কোথায় বসার উপায় নেই। কিন্তু প্রশাসন মশা নিধনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না জানি না।”
মশা নিধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান বলেন, “ইতোমধ্যে কয়েকবার হলসহ আবাসিক ভবনে ফগিং করা হয়েছে। পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও হলের আশ-পাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।”
কীটতত্ত্ববিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, “ফগিংয়ের মাধ্যমে মশা নির্মূল খুব কার্যকারী পদ্ধতি নয়। মশা নিধনে মশার প্রজননস্থল নষ্ট করতে হবে। এ জন্য মশার প্রজননস্থলে লার্ভিসাইড (লার্ভা নিধনের ওষুধ) ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া নিয়মিত ড্রেন, নর্দমা, ডোবা ও ঝোঁপঝাড় পরিস্কার রাখতে হবে।”
হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক নাজমুল হোসেন তালুকদার বলেন, “ইতোমধ্যে মশা নিধনের জন্য সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি হলে মশার লার্ভা নিধনের ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি হলের আশপাশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে প্রতিটি হলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) রহিমা কানিজেকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি কল রিসিভ করেন নি।