শিক্ষক-সহপাঠীকে দায়ী করে ফাইরুজ অবন্তিকা আত্মহত্যার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের উত্তাপ বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন ব্যানারে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে লাল কার্ড দেখিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী। তারা সাত দিনের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার না হলে প্রক্টর অফিসে তালা ঝোলানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামক ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বরে এ লাল কার্ড প্রদর্শনী আন্দোলন করেন।
এ সময় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী সাম্য বলেন, “বাংলাদেশে কত কিছু ভাইরাল হয়, সেগুলো না হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মকাণ্ড ভাইরাল হওয়া উচিত। তারা যে অনৈতিক ও স্বজনপ্রীতিমূলক কাজ করেন, এগুলো ভাইরাল হওয়া উচিত।”
সাম্য বলেন, “একজন অভিযুক্ত শিক্ষক কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বুক ফুলিয়ে হাঁটেন, কীভাবে চাকরি থাকে তার, এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কাদের সহায়তায় তারা টিকে আছেন, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইভান তাওসিফ বলেন, “আমরা কার কাছে বিচার চাইব? আমরা যাদের কাছে যাব তারাই এখন অভিযুক্ত।”
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, “অবন্তিকার অভিযোগপত্র অবহেলা করেছেন সদ্য সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল। মোস্তফা কামালকে তদন্তের আওতায় আনতে হবে। তিনি যদি অভিযোগটা ঠিকভাবে আমলে নিতেন, হয়তো আজ প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতো।”
আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, “এ প্রক্টর অফিসে কী না হয়েছে। আগের প্রক্টর মোস্তফা কামাল কী করেন নাই। রিকশাচালককেও অত্যাচার করা হয়েছে। যেখানে তাদের অভিভাবকের মতো হওয়ার কথা কিন্তু তারা উল্টো। এ কাঠামো আমরা ভেঙে দিতে চাই। আমরা প্রশাসন থেকে একটা শক্ত অঙ্গীকার চাই। সর্বোপরি অবন্তিকার আত্মহত্যার প্ররোচনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
এ সময় আন্দোলনকারীরা আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু বিচার না হলে প্রক্টর অফিসে তালা দেবেন বলে হুঁশিয়ার দেন। একই সঙ্গে সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
এর আগে শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে জবির আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা ফেসবুকে শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে পোস্ট দেন। এর কিছুক্ষণ পরই কুমিল্লার নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস নেন ওই ছাত্রী। আত্মীয় ও পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওই শিক্ষার্থীর পোস্ট করা সুইসাইড নোটে সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, হুমকিসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন। আর সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে অফিসে ডেকে নিয়ে হয়রানি ও মানহানির অভিযোগ তুলেছেন। তা ছাড়া ‘সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজিভ কমেন্ট’ করার অভিযোগ তুলেছেন ওই ছাত্রী।
এ ঘটনার পরপরই বিক্ষোভে নামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে আগুন জ্বালিয়ে ভোর পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। পরে রাত দেড়টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ক্যাম্পাসে এসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। উপাচার্যের আশ্বাসের পরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থামাননি। পরে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেনকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠম করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে।
শনিবার রাতে অবন্তিকার মা বাদী হয়ে কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকি আম্মান ও শিক্ষক দ্বীন ইসলামসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে পুলিশ ওই রাতেই অভিযুক্ত আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে আটক গ্রেপ্তার করে।