দেশের ইতিহাসে কোনো এক জেনারেশন নিয়ে আলোচনা এই প্রথম। আর যে জেনারেশন আলোচনায় এসেছে তারা হলো, জেনারেশন জেড বা জেন-জি। এই জেনারেশন মূলত আলোচনায় এসেছে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে তাদের অংশগ্রহণের পর।
বিভিন্ন সময়ে প্রজন্মের নানা নামকরণ হয়। যেমন- যারা ১৯০১ থেকে ১৯২৭ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের বলা হয় ‘গ্রেটেস্ট জেনারেশন’ বা মহত্তম প্রজন্ম। আর ১৯২৮ থেকে ১৯৪৫ সালের জন্মগ্রহণকারীরা হলেন ‘সাইলেন্ট জেনারেশন’ বা নীরব প্রজন্ম। এরপর ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তারা হলেন ‘বেবি বুমার্স জেনারেশন’।
এরপর যারা ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের বলা হয়, ‘জেনারেশন এক্স’ বা ‘জেন-এক্স’। এই নাম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বলা যায়, জেনারেশন এক্স সরাসরি বেবি বুমার্স জেনারেশনকে অনুসরণ করে। ‘জেনারেশন-এক্স’ মূলত তাদের আগে জন্মানো বেবি বুমার্স ও জেনারেশন ওয়াইয়ের মাঝখানে পড়ে যাওয়া ‘স্যান্ডউইচ’।
যাদের জন্মকাল ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তাদের বলা হয় ‘জেনারেশন ওয়াই’ বা মিলেনিয়াল। এই জেনারেশনের বর্তমান বয়স ২৮ থেকে ৪৩ বছর। এ প্রজন্মকে বলা হয়, ‘নাইন্টিজ কিডস’ বা নব্বইয়ের সন্তান। যাদের মা-বাবারা বুমার্স ও জেনারেশন এক্সের সদস্য।
আর যাদের জন্মকাল ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত, তারাই হলেন ‘জেনারেশন জেড’ বা ‘জেন-জি’। এদের বর্তমান বয়স ১২ থেকে ২৭ বছর। এই জেনারেশনের কথা বার্তা, প্রেম ভালোবাসার প্রকাশ মাধ্যম, আচার আচরণ অনেকটাই অন্যসব প্রজন্ম থেকে ভিন্ন।
যদিও প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সংযোজন জেনারেশন আলফা। তবে বর্তমান আলোচনা জেনারেশন জেড বা জেন-জি নিয়ে। যাদের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে। আন্দোলনের শুরু থেকে সরকার পতন পর্যন্ত তারা ছিলেন অতিমাত্রায় সক্রিয়। এমনকি পুলিশের গুলির সামনে বুক চেতিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণসহ নানাভাবে সহযোগিতা করতে গিয়ে জেন জিদের অনেকে হতাহত হয়েছেন। তবে আন্দোলন শেষেও তারা থেমে থাকেন নি। নগর, মহানগরের দেয়ালে দেয়ালে তারা গ্রাফিতি এঁকে বিজয় উৎযাপন করেছেন। আন্দোলনের নানান চিত্র তুলে ধরেছেন। আন্দোলনে অংশগ্রহণ, চাল-চলনসহ তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়।
জেন-জি দের ভাষা
দিনের বড় একটা সময় কাটে আমাদের অনলাইনে বার্তা আদান-প্রদান করে। তবে জেন-জিরা সময়টাকে কমিয়ে আনে কিছু শব্দের মাধ্যমে। যা জেন-জিদের ভাষা। তাদের বুঝতে গেলে তাদের এইসব ভাষা বুঝতে হবে। যেমন- তারা ‘থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ’ বাক্যকে সংক্ষেপে বলে ‘টিওয়াইএসএম’ (TYSM)। ‘লেট মি নো’ বুঝাতে তারা লেখে ‘এলএমকে’ (LMK)। তারা আদর করে পছন্দের মানুষ, বিশেষত বন্ধু ও ভালোবাসার মানুষকে ডাকে ‘পুকি’। এরকম আরও সংক্ষিপ্ত শব্দ ব্যবহার করে তারা।
ফোনে কথা বলা অপছন্দ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আসউইচ ১৮-৩৪ বছর বয়সী দুই হাজারের বেশি ফোন ব্যবহারকারীদের ওপর জরিপ চালায়। জরিপে উঠে আসে, বয়স ৩৫ এর নিচে এমন মানুষগুলো যারা মূলত জেন জি তারা ফোনে কথা বলতে কিংবা ফোনকল ধরতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। গবেষকেরা জানান, ১৮-৩৪ বছর বয়সীদের এক–চতুর্থাংশ ফোনকল গ্রহণ করেন না। তারা লিখিত বার্তার মাধ্যমে উত্তর বা প্রতিক্রিয়া জানাতে বেশি পছন্দ করেন। অধিকাংশ তরুণ অপ্রত্যাশিত ফোনকলকে খারাপ খবর বলে মনে করেন।
কর্মস্থলে খাপ খাওয়াতে না পারা
গবেষণায় দেখা যায়, জেন-জিরা প্রতিনিয়ত কর্মস্থলের সাধারণ গতির সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে ইন্টেলিজেন্ট ডটকমের চিফ এক্সিকিউটিভ এন্ড কেরিয়ার ডেভলেপমেন্ট এডভাইজার হুয়ি এন বলেছেন, এই তরুণ পেশাদারদের যে শিক্ষাব্যবস্থা তার মাধ্যমে তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে, কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব থাকে। কিন্তু এই অভিজ্ঞতায় কর্মক্ষেত্রে সফল হতে প্রয়োজন।” একটি কাঠামোবদ্ধ শিক্ষামূলক পরিবেশ থেকে একটি পরিবর্তিত কাজের পরিবেশে স্থানান্তর এই প্রজন্মের জন্য বিরক্তিকর হতে পারে। তাই জেন-জিরা কর্মস্থলে খাপ খাওয়াতে পারেন না।
চাকরিতে আগ্রহ কম
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের স্যানট্যানডার ব্যাংক জেন-জিদের নিয়ে সমীক্ষা করেছে। সেখানে দেখা যায়, ৭৬ শতাংশ জেন–জি কারও অধীনে কাজ করতে আগ্রহী নন। ৯টা-৫টার একঘেঁয়ে কর্মজীবন তাদের পছন্দ নয়। জেন–জিদের ৭৭ শতাংশ বিশ্বাস করেন, তাদের ব্যবসা শুরু করার যোগ্যতা আছে।
চাকরিজীবীরা দুপুরে খান না
ইজিকেটারের করা গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৭ শতাংশ চাকরিজীবী জেন-জি কর্মক্ষেত্রে দুপুরের খাবার খান না। এই গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ হাজার কর্মীর ওপর চালানো হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়, চাকরিজীবী জেন-জিরা কাজের চাপের কারণে দুপুরের খাবার এড়িয়ে যান। দুপুরের খাবারের জন্য অফিসের বাইরে বের হওয়াকে অপরাধ বলে মনে করে। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৫ হাজার জেন-জি চাকরিজীবীর মধ্যে ৪৭ শতাংশ প্রতি সপ্তাহে দু’বার বা তার বেশি মধ্যাহ্নভোজ করেন না।