জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেন চার শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী। পরে মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
এ সময় বাংল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীমা সুলতানা বলেন, “আমরা সবাই এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। আমরা একত্রিত হয়েছি, এই অন্যায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। ধর্ষকের সার্টিফিকেট স্থগিত করা হোক। প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে আজ এত বড় নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটাতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে নৈতিকতা শেখায়, ধর্ষক তৈরি করে না। অথচ আজ তাদের নৈতিক অবক্ষয়ে দাঁড়িয়ে আছে।”
অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, “গতকালের (৩ ফেব্রুয়ারি) ঘটনায় হল প্রশাসন তার দায় এড়াতে পারে না। আমি একটি কথা বলি, নিপীড়কের কোনো পরিচয় থাকতে পারে না। সে যেই হোক, হোক শিক্ষক, শিক্ষার্থী। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
মানববন্ধনে অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, “একটা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্বামীকে হলে জিম্মি করে তার স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। আজকে আমি ক্লাসে বলেছি, এই বিশ্ববিদ্যালয় গজব নাজিল হওয়া উচিত, আমাদের সবার ধ্বংস হয়ে যাওয়া উচিত। এই সভ্যতার বিশ্ববিদ্যালয় কোনো দরকার নেই। ১৯৯৮ সালে আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্ষকদের বিতাড়িত করেছি, সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরকে খুনিদের মদদ দেওয়ায় তাকে বিতাড়িত করেছি। কিন্তু আজকে আমরা আবার দেখতে পেয়েছি আমাদের এই ক্যাম্পাসে একদল নষ্ট মানুষ যারা ক্ষমতায় বসে আছে, যারা নির্লজ্জ, অসভ্য। যাদের কোনো বোধ নেই, বুদ্ধি নেই। তারা ওই চেয়ার দখল করে বসে আছে।”
অধ্যাপক গোলাম রব্বানী আরও বলেন, “ক্যাম্পাসে এখন প্রায় আড়াই হাজার অছাত্র রয়েছে। এই ধর্ষণ কোনো বিছিন্ন ঘটনা নয় যতদিন প্রশাসনের মদদে এই ক্যাম্পাসে অছাত্র, অবৈধ ছাত্র অবস্থান করবে। ছাত্রলীগ নামধারী অছাত্ররা নিয়োগ বাণিজ্য করবে, চাদাবাজি করবে ততদিন এই ক্যাম্পাস থেকে অপরাধ দূর করা সম্ভব নয়। আমরাও উপাচার্যকে বলে দিতে চাই, আমরা অনেক বড় বড় উপাচার্যকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছি। আমরা আপনাকেও বিতাড়িত করে ছাড়ব যদি আপনারা এদের বিচার না করেন। আমরা এই ধর্ষকদের ফাঁসি চাই। এই ধর্ষণকারীদের মদদদাতা প্রশাসনের পদত্যাগ চাই, এই ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। এই ক্যাম্পাসে কোনো অবৈধ, সন্ত্রাসী, অছাত্র, মাদকব্যবসায়ী থাকবে না। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে প্রয়োজনে আমি শহীদ হয়ে যাব। যে সব হলে প্রাধ্যক্ষ অছাত্রদের দিয়ে হল চালায় প্রাধ্যক্ষ থাকতে পারবে না।”
অধ্যাপক আনোয়ারুল্লা ভূঁইয়া বলেন, “আপনারা জানেন এক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট যৌন নিপীড়ণের অভিযোগ থাকলেও তার কোনো সঠিক বিচার হয়নি। কোনো ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। প্রত্যেকটা ঘটনার সঙ্গে থাকে একটা যোগাযোগ একটা কার্যকারণিক সম্পর্ক। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অপরাধের বিচার হয় না। গতকালের ঘটনায় দেশব্যাপী আমার ক্যাম্পাসকে আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, পত্রিকার মাধ্যমে লজ্জিত হয়েছে, অপমানিত করা হয়েছে। আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ২৫ বছর ধরে আছি। আমি শিক্ষক হিসেবে অপমানিত হয়েছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের অপমানিত করা হয়েছে সেই অপমানিদের পক্ষে আমরা শেষ সময় পর্যন্ত থাকব। এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, কোনো ছলচাতুরীর আশ্রয় নেওয়া হয় তাহলে যারা এই ছলচাতুরীর আশ্রয় নেবে তাদের আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করব।”