জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রশাসনিক ভবনের সামনে রয়েছে শহীদ মিনার। বছরজুড়ে অরক্ষিত থাকা শহীদ মিনারটি ভাষার মাসেও অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহীদ মিনার পরিষ্কার থাকার কথা থাকলেও সবচেয়ে অবহেলিত এবং উপেক্ষিত। এর কিছু কিছু অংশে টাইলস ভেঙে গেছে। পাশের গাছগুলো থেকে শুকনো পাতা পড়ে মিনারের চারপাশ অপরিষ্কার হয়ে আছে। স্টিলের রেলিংগুলো মরিচা পড়ে গেছে। দীর্ঘদিন কোনো যত্ন না নেওয়ায় মিনারের সাদা রং উঠে কালো হয়ে গেছে। এছাড়াও টাইলসে জমে আছে শেওলার আস্তরণ।
শহীদ মিনারের মোট আটটি বেদি রয়েছে। প্রতিটি বেদি বৃত্তাকারে সাজানো। প্রত্যেকটি নিজ অবস্থানে পেছনের দিকের পাদদেশে কোমর ভেঙে হেলানো। প্রধান বেদিটি দাঁড়ানো অবস্থায় সামনের দিকে অর্ধনমিতভাবে রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জুতা পরে শহীদ মিনারে উঠে পড়ে, যা নিকৃষ্টতম কাজ। মিনারটি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা প্রশাসনেরই দায়িত্ব। কেউ যেন জুতা পরে মিনারের উপরে না উঠতে পারে, সে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মিতু রানী বলেন, “দীর্ঘ বিরতির পর সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে এসেছিলাম। শহিদ মিনারের পাশ দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়ল আবর্জনা। দেখে মনে হচ্ছে কোনো কাঁচাবাজারের সামনে দিয়ে যাচ্ছি। অথচ এই ভাষার মাসে আমাদের উচিত ছিল শহীদ মিনারকে নতুন রূপে সাজানো। একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হিসেবে বিষয়টি আমার কাছে খুবই লজ্জার।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল আওয়াল পারভেজ বলেন, “দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার। বিভিন্ন জায়গায় টাইলস ভাঙা, বেদিগুলোর রং চটে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। উপরন্তু শিক্ষার্থীদের অসচেতনার ফলে শহিদ মিনারের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। মিনারকে এমন অপরিচ্ছন্ন যত্নহীন অবস্থায় ফেলে রাখা ভাষা শহিদদের অপমানের সামিল। প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ, এটি সংস্কারে যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং পরিচ্ছন্ন রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, “২১শে ফেব্রুয়ারি নামটা শুনলে কেমন যেন চোখের সামনে একটা গোছালো শহিদ মিনার ভেসে উঠে। আমরা যারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করি তাদের একটা আবেগের নাম শহিদ মিনার এবং ভাষা শহিদের স্মরণে এই স্তম্ভ করা হয়েছে। কিন্তু সেটা অবহেলায় রেখে দিয়েছে জবি প্রশাসন।”
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কলা অনুষদের ডিন ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম বলেন, “ভাষার মাস আসলে আমরা শহিদ মিনারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ভাবি। অথচ সারা বছর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার পরিষ্কার রাখা উচিত। সামনে ভাষা দিবস উপলক্ষে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এবং আমি শহিদ মিনারের সমস্যার বিষয়গুলো প্রস্তাবনা করেছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা কামাল বলেন, “বিষয়টি আমরা আমলে নিয়েছি এবং আজকের আলোচনায় এ বিষয়টি উপাচার্যকে অবগত করা হয়েছে। উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় শহিদ মিনার কালকের মধ্যে পরিষ্কার ও আলপনার মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে। যত ধরনের পেরেক আছে, সবগুলো সরানো হবে।”