অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে শিক্ষিকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বুধবার (৩ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নিচে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহেদ রানার সঞ্চালনায় শিক্ষকেরা বলেন, “আমরা এই বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার ও আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি জারি রাখব।”
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রববানী বলেন, “আমরা একটা চক্রান্তের স্বীকার হয়েছি। সরকারের বোঝা উচিত যে, আমলারা এই ধরনের স্কিমের মাধ্যমে শিক্ষকদের অপমানিত করেছে। আমি বলতে চাই, শিক্ষকদের এই আন্দোলন যৌক্তিক আন্দোলন। কেননা এ দেশে ৫২ থেকে শুরু করে যত আন্দোলন হয়েছে তা করেছে ছাত্ররা এবং এর পেছনে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সুতরাং শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করে যাব।”
প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, “আমরা যখন দেখেছি, আমাদের সরকার পেনশন স্কিমের ধারণা দিচ্ছে তখন কত চমৎকার ছিল যে সব ধরনের পেশার লোকজন এর আওতায় আসবে। কিন্তু যখন প্রত্যয় স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন এলো, সেটি শিক্ষদের ওপর বৈষম্যমূলকভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা অর্থমন্ত্রীর কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করেছিলাম। কিন্তু তার বক্তব্যে আমরা ব্যাহত হয়েছি।”
ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক সোহেল রানা বলেন, “একটা কুচক্রী মহল আমাদের নানাভাবে অবদমন করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই, আমাদের শিক্ষকদের যে সম্মান সেটি ফিরিয়ে দিয়ে আমাদের এই ধরনের বৈষম্যমূলক স্কিমের আওতায় রাখবেন না।”
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, “বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বায়ত্তশাসন দিয়েছেন, আমাদের গবেষণার স্বাধীনতা দিয়েছেন, চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছেন সেখানে কোন আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতায় আমাদের সেঙ্গ আলোচনা না করে এই ধরনের একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষকদের আলোচনার বাইরে রেখে প্রত্যয় স্কিম নামক এক হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যেখানে আমলারা দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না, অর্থমন্ত্রীও আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তাহলে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেমের স্বপ্ন দেখেছি, সেটা কীভাবে সম্ভব।”
সমাপনী বক্তব্যে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, “আমরা যেভাবে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছি, তেমনি আমাদের দাবি আদায়ের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি দিয়েছি। তবে আমরা ক্লাসে ফিরতে চাই। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। আজকে ছাত্ররা আন্দোলন করছে, অথচ আপনিই বলেছিলেন, যে কোটা থাকবে না। কিন্তু আবার কেন কোটা দেওয়া হলো? আপনিই বলেছেন, পেনশন সংক্রান্ত কোনো ঝামেলা হবে না, কিন্তু তারপরেও কেন শিক্ষকদের এই ধরনের বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিমের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।”
মোতাহার হোসেন আরও বলেন, “আমরা বলতে চাই, একটা কুচক্রী মহল শিক্ষকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। আপনি শিক্ষকদের লাঞ্চিত করে এই ধরনের স্কিম জারি রাখবেন না, এইটা আপনার কাছে অনুরোধ। শিক্ষকদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে দ্রুত ক্লাসে ফেরার সুযোগ করে দিন।”
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, লুৎফর রহমান, শফিক উর রহমান, শফিকুল ইসলাম, সুব্রত বণিকসহ আরও অনেকে।