চট্টগ্রামে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত সোয়া ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও রুখে দাও’, ‘উগ্রবাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ইসকনকে নিষিদ্ধ, করতে হবে, করতে হবে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘আদালতে উকিল মরে, এই সরকার কী করে?’, ‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, উগ্রবাদের ঠাঁই নাই’, ‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, ইসকনের ঠাঁই নাই’, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘বিচার চাই, বিচার চাই, সাইফুল হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আঞ্জুম শাহরিয়ার বলেন, “আমাদের দেশে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান মিলে আমরা যে সুখে শান্তিতে বসবাস করছি, সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে কিছু উগ্রবাদী সংগঠন। এই উগ্রবাদী সংগঠনের লিডার বলেছেন, তিনি আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে চান। পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করে এমন কোনো উগ্রবাদী সংগঠনকে আমরা নতুন বাংলাদেশে দেখতে চাই না।”
শাহরিয়ার বলেন, “আজকে চট্টগ্রামে আমাদের এক আইনজীবী ভাইকে তারা কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমরা সরকারকে বলতে চাই, বাংলাদেশকে অশান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত সকল উগ্রবাদী সংগঠনকে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করুন। কোনো ধর্মের মানুষের ওপর কোনো ধরণের আক্রমণ হোক সেটা আমরা চাই না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পরে গঠিত অন্তবর্তীকালীন সরকার যেন ঠিকভাবে কাজ করতে না পরে সেজন্য একটি গোষ্ঠী কাজ করে যাচ্ছে। এই গোষ্ঠীর যেকোনো ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ রুখে দিতে প্রস্তুত আছে। চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে আজকে যে ঘটনা ঘটেছে এর দায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের অতি দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।”
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম আদালতে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের পর তার অনুসারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম আদালতে সংঘর্ষের ঘটনায় হতাহত ৬-৭ জন চমেক হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে সাইফুল ইসলাম নামের এক আইনজীবীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়। তার শরীরে একাধিক কোপের চিহ্ন রয়েছে।