জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার পর পদত্যাগ করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হাসান তালুকদার। সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুরে পদত্যাগ করেন তিনি।
এর আগে, রোববার রাতে তার উসকানিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালান বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে তার দাবি, ব্যক্তিগত কারণে তিনি পদত্যাগ করেছে। তিনি বলেন, রাতে পদত্যাগের কথা জানিয়েছিলাম। ব্যক্তিগত, পারিবারিক কারণ এবং আত্মমর্যাদা রক্ষায় লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার রাত নয়টার দিকে বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা, ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার’, ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তাঁরা বিভিন্ন হল থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের বটতলায় জড়ো হতে থাকেন। ওই সময় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে দুজন আন্দোলনকারীকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এ খবর জানাজানি হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁদের মুক্ত করার জন্য বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা ওই হলের সামনে অবস্থান নেন।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ওই রাতে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে নিয়ে বৈঠকে বসেন হলটির প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হাসান তালুকদার। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাত সোয়া দুইটার দিকে মিছিলটি আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে গেলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এতে বাধা দেন এবং মুখোমুখি অবস্থান নেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলমগীর কবিরসহ কয়েকজন শিক্ষক দুই পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের জামায়াত-শিবির বলে আখ্যা দেন।
গতকাল রাতে পদত্যাগের কথা জানিয়েছিলাম। ব্যক্তিগত, পারিবারিক কারণ এবং আত্মমর্যাদা রক্ষায় আজ (সোমবার) লিখিতভাবে পদত্যাগ করেছি।
নাজমুল হাসান তালুকদার
এর একপর্যায়ে রাত পৌনে তিনটার দিকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালানো হয়। হামলার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা গেছে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রত্যাশী ৪৬ ব্যাচের ছাত্র প্রাচুর্যসহ বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে হামলা করছেন।
ওই হামলায় ছাত্রলীগকে প্রাধ্যক্ষ উসকে দিয়েছেন—এমন অভিযোগে রাত চারটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন নাজমুল হাসান। এ সময় ব্যর্থতার দায় স্বীকার তার পদত্যাগ চেয়ে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে রাতেই মৌখিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।