জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় সবকিছু সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করে তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম। একইসঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সামনের সিন্ডিকেটেই সব তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা হবে।
রোববার (১৭ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সাদেকা হালিম বলেন, “আমি আগেই উল্লেখ করেছিলাম, কাজটি বড় পরিসরের। কারণ যে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে সে কিন্তু নোটে অনেক কিছুই লিখে গেছে। একজন শিক্ষার্থী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে তখন তার সহপাঠীদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক হয়। তার শিক্ষকদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক হয়, প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তাই যখন এটা তদন্ত আমরা করি তখন সেটা কিন্তু বড় পরিধিতে সবকিছু সূক্ষ্মভাবে করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সবকিছু এককভাবে হয় না, সেকারণে সবকিছু সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা হবে।”
উপাচার্য বলেন, “এখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে আইন আছে, সেই আইন মোতাবেক কাজ করতে হয়। অনেকেই হয়তো এটা বাইরে থেকে বুঝতে পারেন না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আমাদের আইন দ্বারা কাউকে পেনালাইজ করি তখন সেটা কয়েকটা টায়ারে যেতে হয়। নইলে সে কিন্তু কোর্টে যেতে পারে এবং কোর্টে যদি আমাদের তদন্তে কোনো দুর্বলতা থাকে তখন সেই সুযোগে কোনো শিক্ষক বা অন্যান্য কেউ থাকে তখন সেটা ফেরত চলে আসে। এই ধরনের নজির কিন্তু বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। সেজন্য কোনো তদন্ত তড়িঘড়ি করে করলে সেখানে কিন্তু দুর্বলতা থাকে।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, “আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি মোকাবিলা করার জন্য তাৎক্ষণিক অভিযুক্ত দুজনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছি। হাইকোর্টের নির্দেশে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের যে কমিটিটা (বিশ্ববিদ্যালয়ে) করা আছে। সেটা আইনে এখনো পরিণত হয়নি, কিন্তু নির্দেশ দেওয়া আছে যে যাদের এই ঘটনায় অভিযুক্ত করা হয়, তাদের কর্মক্ষেত্র থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এটা কঠিন সিদ্ধান্ত হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তা নিয়েছে এবং তড়িৎ গতিতেই আমরা একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছি। তারা তাদের কাজ শুরুও করেছেন।”
সাদেকা হালিম আরও বলেন, “প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইন আছে। আপনারা যদি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখেন, দেখবেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিগুলো কীভাবে এগুচ্ছে। অনেকগুলো কমিটিই আমি লক্ষ্য করেছি, তারা কাজ করছে।”
এর আগে শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে জবির আইন বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা ফেসবুকে শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে পোস্ট দেন। এর কিছুক্ষণ পরই কুমিল্লার নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস নেন ওই ছাত্রী। আত্মীয় ও পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই শিক্ষার্থীর পোস্ট করা সুইসাইড নোটে সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে হয়রানি, হুমকিসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন। আর সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে অফিসে ডেকে নিয়ে হয়রানি ও মানহানির অভিযোগ তুলেছেন। তা ছাড়া ‘সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজিভ কমেন্ট’ করার অভিযোগ তুলেছেন ওই ছাত্রী।
এ ঘটনার পরপরই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে আগুন জ্বালিয়ে ভোর পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। পরে রাত দেড়টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ক্যাম্পাসে এসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের। উপাচার্যের আশ্বাসের পরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থামাননি।
শনিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে। শনিবার রাতে অবন্তিকার মা বাদী হয়ে কুমিল্লার কোতয়ালী থানায় অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকি আম্মান ও শিক্ষক দ্বীন ইসলামসহ কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে ওই রাতে পুলিশ অভিযুক্ত আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে আটক দেখায়।