আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে ‘রূপান্তরমূলক সমাধানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীমূলক উন্নয়ন’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য দুইটি পাঠ কক্ষের উদ্বোধন করা হয়।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নিচতলায় দুই কক্ষের এই বিশেষ পাঠকক্ষ উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম। ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ডিভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) জাবি শাখা এ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ১০ দফা দাবি জানিয়েছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ)।
অনুষ্ঠানে ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জ ডিভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) ১০টি দাবি জানান। দাবিগুলো হলো নবনির্মিত হল এবং ভবনসমূহে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে র্যাম্প (আনুভূমিকের সঙ্গে ২০°) করা, হলসমূহে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট সিটের ব্যবস্থা করা, প্রত্যেক অনুষদ ও প্রশাসনিক ভবনে র্যাম্পের ব্যবস্থা করা, একাডেমিক ও ভর্তি পরীক্ষায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময়ের ব্যবস্থা করা এবং ভর্তি পরীক্ষায় আলাদা কক্ষে পরীক্ষা নেওয়া, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইলের ব্যবস্থা করা, সকল প্রকার পরীক্ষার ফি, হল চার্জ মওকুফ এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছল প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা, ক্যাম্পাসের বাসগুলো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি সিট সংরক্ষিত করা, প্রতিবন্ধী কোটায় আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা ও কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে পিডিএফকে সহায়তার সুযোগ দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের যোগ্য বিবেচনা করে তাদের সুযোগ দেওয়া ও কাজের সুবিধার্থে পিডিএফ জাবি ইউনিটের জন্য স্থায়ী অফিস কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া।
দাবিগুলোর প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আলম বলেন, “এই দাবিগুলো যথেষ্ট যৌক্তিক এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উক্ত দাবিগুলো পূরণের মাধ্যমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: নূরুল আলম বলেন, “প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চলাফেরা এবং তাদের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে নানা ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নব নির্মিত আবাসিক হল এবং একাডেমিক ভবনগুলোতে তাদের চলাফেরার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
কেট ও ফিতা কেটে পাঠকক্ষের উদ্বোধনের পর কক্ষ দুইটি ঘুরে দেখেন উপাচার্য। এসময় তিনি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধীবান্ধব ক্যাম্পাস গঠনে তাদের আশ্বস্ত করেন।
কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী অহেদুর রহমান বলেন, “গ্রন্থাগারে এতো দিন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পরিবেশ ছিল না। আজ গ্রন্থাগারে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পাঠাগার কক্ষের উদ্বোধন করায় ভীষণ ভালো লাগছে। এখন ইচ্ছে হলে গ্রন্থাগারে এসে পড়ালেখা করতে পারবো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বান্ধব অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। তবে এ সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তিনি আশা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আরও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।”
অনুষ্ঠানে গ্রন্থাগারের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম শামীম কায়সার বলেন “ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কল্যাণে পরিচালিত ডাইভার্স এশিয়া প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলাসহ নানান ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (চুক্তিভিত্তিক) রহিমা কানিজ, ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. এ এ মামুন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম আতিকুর রহমান, গ্রন্থাগারের সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ হানিফ আলী প্রমুখ।