রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা আসমাউল হোসনা। বড় মেয়েকে একা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে ছোট ছেলেকে নিয়ে এসেছেন বিদ্যালয়ে। অন্যদিন সন্তান একা আসলেও আজকে তিনি ছেলের সঙ্গে বিদ্যালয়ে এসেছেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ঘিরে আতঙ্কে আছেন এই অভিভাবক।
সোমবার (৬ নভেম্বর) তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে। আলাপের এক পর্যায়ে তিনি সংবাদ প্রকাশের কাছে ব্যক্ত করেন বর্তমান পরিস্থিতিকে ঘিরে সন্তানদের পড়ালেখা ও নিজের মানসিক অবস্থার কথা।
আসমাউল হোসনা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “চারদিকে যে আগুন আর ভাংচুরের ঘটনা শোনা যাচ্ছে। এতে করে ছেলে-মেয়েকে একা ছেড়ে দিতে ভরসা পাই না। তাই নিজেই নিয়ে এসেছি। যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো, তাই স্কুলের (বিদ্যালয়) বাইরে বসে আছি। বড় মেয়ে ভার্সিটিতে (বিশ্ববিদ্যালয়) একা গেছে। টেনশন (চিন্তা) তো হচ্ছেই। এখানে আসার পথে ঝুঁকি নিয়ে আসতে হয়েছে। আগুন-ভাংচুরের ভয় দেখিয়ে বাসের চালক জানালা বন্ধ করে দিয়েছে। তা শুনে আমার ছেলেটা ভয় পেয়েছে। পরীক্ষা কেমন যে দিচ্ছে কে জানে? সকলেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সন্তানদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে এসব হরতাল-অবরোধের কারণে। এতে দেশের শিক্ষাখাতের অবনতি হবে।”
এদিন আসমাউল হোসনার মতো অনেক অভিভাবকের সঙ্গে সংবাদ প্রকাশের কথা হয়। সকলেই বলছেন, দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিবেশ সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে রেখেছে।
এতে একদিকে যেমন প্রশ্ন উঠেছে জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে। একইভাবে সন্তানদের পড়াশোনা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন শঙ্কা। শিক্ষকরাও বলছেন, হরতাল-অবরোধ এবং আতঙ্কের মতো পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
গত ২৮ অক্টোবর থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এদিন রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি সমাবেশ থেকে পর্যায়ক্রমে হরতাল, অবরোধ ও অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব কারণে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মনেও। অভিভাবকরা চরম উদ্বিগ্ন হয়ে সময় পার করছে।
সোহেল নামের এক অভিভাবক বলেন, “পরীক্ষা আছে বলেই নিয়ে এসেছি। নইলে ঝুঁকি নিয়ে আসতাম না। কারণ বাচ্চার কিছু হলে আমারই যাবে। তার দায় ভার, সরকার বা স্কুল কেউ নেবে না। ছোট ছোট বাচ্চাদের শিক্ষার কথা ভেবে এসব হানাহানি, জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করা উচিত। তারা সমঝোতায় বসলে ভালো হয়।”
নাজমুস শাহ্ নামের গভর্নমেন্ট সায়েন্স হাই স্কুলের নবম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আগে বড় রাস্তার পাশ দিয়ে আসতাম। এখন অলিগলি দিয়ে হেঁটে আসতে হয়। বাইরে এখন গোণ্ডগোল বাঁধে বলে, বাবা-মা বের হতে দিতে চায় না। ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসলে আমাদেরও মনোযোগ নষ্ট হয়।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, “অবরোধ, হরতাল কর্মসূচি যে দলই ঘোষণা করুক। এতে স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছড়াবে। এসব কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এতে পড়ালেখার ক্ষতি হয়।”