গরম বেড়ে গেছে প্রচণ্ড রকম। দেশের বেশিরভাগ জেলায় চলছে তাপপ্রবাহ। গরম আরও বাড়ার শঙ্কায় তিনদিনের হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর এর মধ্যেই রোববার (২১ এপ্রিল) খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দুই সন্তানকে স্কুলে পাঠানো নিয়ে প্রচণ্ড উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় মা সৈয়দা বদরুন নেসা। এমন তাপপ্রবাহের মধ্যে বাচ্চারা কীভাবে স্কুলে যাবে, ক্লাসই বা করবে কীভাবে, প্রচণ্ড গরমে যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে কে দেখবে।
এমন দুশ্চিন্তায় রয়েছেন রাজধানীর ইস্কাটনে বসবাসকারী কলেজ শিক্ষক সৈয়দা বদরুন নেসা। ভাবছেন বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাবেন কি না। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বললেন, যে গরম পড়েছে আমরা বড়রাই বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছি। সেখানে ছোট বাচ্চাদের কী হবে? হিট অ্যালার্টের মধ্যে স্কুল বন্ধ রাখাই মনে হয় ভালো হবে।
ঠিক একইভাবে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রাজধানীর এলিফেন্ট রোডের গৃহিনী রোকসানা ইসলাম। বললেন, একদিকে হিট অ্যালার্ট জারি আছে, আর অন্যদিকে রোববার স্কুল খুলছে। সত্যিই ভয় লাগছে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে। বাসাতেই প্রচণ্ড গরমে ঘামছি আমরা। ফ্যানের বাতাসে কাজ হচ্ছে না। এসি ছাড়া চলছেই না। বার বার হাতমুখ ধুয়ে দিচ্ছি বাচ্চাদের। কীভাবে স্কুলে পাঠাব এমন কাঠফাটা রোদ আর আগুনের মতো গরমের মধ্যে?
শুধু বদরুন নেসা বা রোকসানা ইসলামই নন, রাজধানীর বেশিরভাগ অভিভাবক আর বাবা-মা-ই স্কুলগামী শিশুদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারণ, রমজান ও ঈদসহ ২৬ দিনের ছুটি শেষে রোববার (২১ এপ্রিল) খুলছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে চলমান তাপদাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার দাবি তুলেছেন অভিভাবকদের সংগঠন ‘অভিভাবক ঐক্য ফোরাম’। গত ১৮ এপ্রিল সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। মানুষজনকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করছে প্রশাসন। এর মধ্যে স্কুল কলেজ খুললে অনেক শিশু অসুস্থ হতে পারে। তাই দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় আগামী ৭ দিনের জন্য শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানাচ্ছি। অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি এগিয়ে আনার দাবি করেছেন।
রাজধানীর কয়েকজন শিক্ষক বললেন, অনেক সময় শ্রেণিকক্ষে বিদ্যুৎ থাকে না। তখন প্রচণ্ড গরমে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেজন্য কয়েক দিনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম তারিক আহসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, তাপপ্রবাহের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের মাধ্যমে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।