বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পক্ষ থেকে মেইল পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে খিলাফত প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে মেইল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেইলটির স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন।
এক শিক্ষার্থী জানান, রাত ১২টায় হিজবুত তাহরীরের পক্ষ থেকে খিলাফত প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে মেইল পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিশ্চিত করেছে জঙ্গি সংগঠনটি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পক্ষ থেকে মেইল পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। যদিও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না হিযবুত তাহরীরের পক্ষ থেকে এই মেইল পাঠানো হয়েছে কি না! এ ঘটনায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্র রাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাতে ১২টায় বুয়েটের সব বর্ষের সাধারণ শিক্ষার্থীর ইনস্টিটিউশনাল ই-মেইলে হিযবুত তাহরী থেকে একটি পিডিএফ প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এমন দাবি করা হয়েছে আন্দোলনরকারীদের পক্ষ থেকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘৪ এপ্রিল রাত ১২টায় Subal Das নামে ([email protected]) ই-মেইল থেকে বুয়েটের সব বর্ষের অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর ইনস্টিটিউশনাল ই-মেইলে হিযবুত তাহরীর নামক নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন থেকে একটি পিডিএফ প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। তাদের প্রেস বিজ্ঞপ্তির টাইটেল ছিল- ‘ছাত্রলীগের আগ্রাসন থেকে আমাদের মেধাবী সন্তানদের কে নিরাপত্তা দেবে?’ এবং তারা সাধারণ ছাত্রদের এই নিষিদ্ধ সংগঠনের দিকে আহ্বান করে। আজকে এবং এর আগেও পৃথক পৃথক ই-মেইল ([email protected] [email protected]) ব্যবহার করে এ ধরনের পিডিএফ পাঠানো হয়।’
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় বেনামী স্টিকারে কিউ-আর কোড দেওয়া থাকে, যা স্ক্যান করলে হিজবুত তাহরীর প্রচারণামুখী লেখা দেখা যায়।’
যদিও এর আগেও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নামে ইনস্টিটিউশনাল ই-মেইলে মেইল পেয়েছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘কৌশলে নিষিদ্ধ সংগঠনের এমন তৎপরতায় শঙ্কিত হয়ে আমরা বিভিন্ন সময় উপাচার্য এবং ছাত্রকল্যাণ পরিষদ বরাবর অভিযোগ করি। কে বা কারা গোপনে এরূপ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তা নিয়ে তদন্ত চলমান বলে আমাদের জানানো হয়। নির্দেশনা দেওয়া হয় যে, আমরা যেন উপাচার্য স্যার, এডিএসডব্লিউ (ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক) স্যার এবং আইআইসিটি (ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি) বরাবর অনলাইনে অভিযোগ দাখিল করি।’
৪ এপ্রিলের মেইল পাওয়া প্রসঙ্গে তারা বলেন, ‘বিশেষ করে আজ রাতে গণহারে মেইল আসার পর আমরা সবাই অনতিবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানাই। পাশাপাশি আমাদের মধ্যে অনেকে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জিডি করছে।’
তাহরীরের এমন প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উল্লেখ করে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘স্পষ্টতই হিজবুত তাহরীরের এমন প্রেস বিজ্ঞপ্তিকে সম্পূর্ণরূপে তাদের দলীয় স্বার্থ হাসিল, প্রচারণা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আমরা মনে করছি এবং তাদের বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক নিরাপত্তা দেওয়ার দাবিকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। মূলত হিজবুত তাহরীর মতো নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠনের অস্তিত্বকেই আমরা সমর্থন করি না। সেখানে এরূপ নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থন বা সহানুভূতি গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না।’
বুয়েট উপাচার্যের প্রতি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা কোনো নিষিদ্ধ মৌলবাদী ও জঙ্গি সংগঠনকে কোনোদিন বরদাশত করিনি, করি না এবং করব না এবং আমরা আমাদের মাননীয় উপাচার্য মহোদয়কে আহ্বান জানাচ্ছি যত দ্রুত সম্ভব এর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে। প্রয়োজনে দেশের অন্যান্য ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সহযোগিতায় আইসিটি সেল গঠন করে উক্ত মেইলসমূহের আইপি এড্রেস শনাক্ত করে এবং অপরাধীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসে সেই আহ্বান জানাই।’
এ ছাড়াও নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দেশের আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সোচ্চার ভূমিকা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। সেই সঙ্গে আরও বলা হয়, ‘নিষিদ্ধ মৌলবাদী ও জঙ্গি সংগঠনের কোনো স্থান এই বুয়েটে হবে না এবং বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা সর্বোচ্চ অবস্থানে থেকে প্রতিহত করার চেষ্টা করবে’ বলে ওই বিবৃতিতে জানান তারা।