• ঢাকা
  • বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, ২ জ্বিলকদ ১৪৪৬

ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সাংবাদিককে হেনস্তা


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৫, ০৫:৫২ পিএম
ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সাংবাদিককে হেনস্তা
ঘটনাস্থল। ছবি : প্রতিনিধি

জুলাই আন্দোলনকারীদের দুর্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীকে হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধি ওয়াসিফ আল আবরার।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১২টার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠান।

এ ঘটনায় নিষিদ্ধ সংগঠন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান হাফিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহুল ইসলাম বিভিন্ন নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এ ছাড়া সমন্বয়কদের একটি পক্ষও এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানান।

হল সূত্রে জানা যায়, আবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছিলেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে প্রভোস্টের নিকট তাকে হল থেকে নামানোর দাবি জানান।

শিক্ষার্থীদের দাবি, ওয়াসিফ আল আবরার কলেজে থাকা অবস্থায় পাবনার বেড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিল। জুলাই আন্দোলনেও তার ভূমিকা বেশ বিতর্কিত। চারদিকে যখন আন্দোলনকারীরা একে একে শহীদ হচ্ছিল, তখন সে হাসিমাখা ছবি পোস্ট করে। ৫ আগস্টের পর নির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে হল থেকে নামিয়ে দিয়েছে। সে অবৈধভাবে হলে ছিল। তার নিজস্ব সিট ছিল না। অনেকদিন ধরে ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় ছিল। স্যার নামিয়ে দেওয়ার পরে তাকে কিছু লোক আশ্বাস দেয় যে, স্যার নামিয়ে দিয়েছে তো কি হয়েছে, আমরা তোকে দেখব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনহাজ বলেন, “৫ আগস্টের পর তাকে শেল্টার দিচ্ছে অন্য একটি পক্ষ। এটা আপনারা সবাই জানেন কোন পক্ষ। নির্দিষ্ট একটা গ্রুপ স্যারের ওপর দিয়ে বলেছে, আমরা দেখতেছি তুই হলে থাক। তারা ছাত্রলীগের পুনর্বাসন করতেছে। যেটা ছাত্ররা মেনে নেয়নি এবং তার রুমে গিয়ে তাকে হল থেকে নেমে যেতে বলেছে। হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার পরেও সে আবার উঠেছে। এগুলো সে নিজ থেকে করেনি, নিশ্চই কারও ইন্ধনে এমন করেছে। তাকে বলার পরে নেমে যাচ্ছিল এমন সময় কিছু লোক উপস্থিত হয়, যাদের হয়তো সে ফোন দিয়েছে তারাই মূলত আজকের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সৃষ্টি করেছে। এক সময় সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। কিন্তু গুরুতর আহত হয়েছেন, এমন না।”

এ বিষয়ে ওয়াসিফ আল আবরার বলেন, “আমাকে ৭/৮ জন লোক গিয়ে বলে ‘তুই ছাত্রলীগ করতি’। আমি বললাম যে না আমি ছাত্রলীগ করতাম না। তারা বলে এটার প্রমাণ আছে তাদের কাছে। আমি অবৈধভাবে হলে থাকি, আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকি। আরও অনেকেই তো অবৈধভাবে থাকে। তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী। ঘটনাস্থলে কয়েকজন বলে, ‘২ মিনিটের মধ্যে হল থেকে বের হবি।’ আমি বের হয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে তারা বলে ‘আপনি হলুদ সাংবাদিক পরে আবার ঝামেলা করবেন’ বলে আমার ফোন নেওয়ার চেষ্টা করে। পরে ৮/৯ জন মিলে রুমের লাইট বন্ধ করে আমাকে মারধর করে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. পারভেজ হাসান বলেন, “তার তেমন গুরুতর কিছু হয়নি। আমরা ধারণা করছি, শ্বাসনালিতে আঘাত লেগেছে। প্রথমে সে সুস্থই হয়ে গিয়েছিল। পরে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল এবং বমি করছিল। এসময় রোগীর সঙ্গে কথা বলে এবং বাইরে থেকে আবার তার ওপর আক্রমণ হতে পারে এমন কথা শুনে তার নিরাপত্তার কথাসহ যাবতীয় বিষয় চিন্তা করে কুষ্টিয়ায় রেফার করেছি।”

শাহ আজিজুর রহমান হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এটিএম মিজানুর রহমান বলেন, “আবরার আমাদের হলের অ্যাটাচড না। অনেকদিন ধরেই ও হলে থাকে।  ও ছিল জিয়া হলে অ্যাটাচড। আমরা হল কর্তৃপক্ষ একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য  মাইগ্রেশনের সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু সে এই সুযোগ নেয়নি। আমরা যখন নোটিশ করি অছাত্ররা হল ত্যাগ করার। সে তখন পুনরায় সুপারিশ নিয়ে আসে। কিন্তু পূর্বের মাইগ্রেশন দেওয়ার পর আর এ সুযোগ আমি কাউকে দেইনি। তো এখন আমি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সিট দেবো। এর প্রেক্ষিতে ওকে হল ত্যাগ করার নির্দেশ দিই। সে চলে যায়। কিন্তু গত পরশু আমি জানতে পারি সে আবার হলে আসছে। তো পরে ওর রুমমেট ইমনকে ফোন দিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে অনুরোধ করি, আবরার যেন হলে না আসে এবং ইমন আমাকে আশ্বাস দেয় সে ব্যবস্থা করবে। কিন্তু তারপরও আজকে রাতে আবরার হলে এলে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। যা খুবই অপ্রত্যাশিত। এটা উচিত হয়নি।”

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমন্বয়কদের দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং দফায় দফায় বাকবিতণ্ডা ও সংঘর্ষে লিপ্ত হন তারা। এ সময় দুই গ্রুপের শিক্ষার্থীরা ভিসি বাংলোর সামনে অবস্থান নেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম ও প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় প্রক্টর অফিসে একটি সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ বিষয়ে ইবির সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, “আবরারের বিষয়ে আমরা চাই এক জায়গায় বসে তার নেগেটিভ ও পজিটিভ নিউজ উভয়ই ধরে নিয়ে প্রমাণ করি আবরার কি ফ্যাসিস্টদের দোসর নাকি দোসর না? আমি মনে করি, আবরার জুলাই আন্দোলনের পক্ষে ছিল। তাই তাকে আমি ফ্যাসিস্টের দোসর মনে করি না। এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনের পর হলের বিভিন্ন ঘটনায় আমরা হলে গেছি। তদ্রূপ আজকের ঘটনায়ও আমরা গিয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

ভিসি বাংলোয় যাওয়ার কারণ হিসেবে নাহিদ বলেন, “আবরারের ইস্যু নিয়ে এমন কোনো ব্যক্তি নাই যে আমি কথা বলিনি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা বলেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এ ব্যাপারে আমরা বসতে পারি নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এ ব্যাপারে জানেন। কিন্তু সবাই জানার পরও টেবিলে বসার কোনো পরিস্থিতি হয় নাই। তারপরও ভিসি স্যারের কাছে যাওয়ার প্রক্রিয়া ভাঙায় আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।”

প্রক্টরিয়াল বডি জানান, এ ঘটনায় সমন্বয়কদের প্রথম ভুল তাদের সমন্বয়হীনতা ও প্রথমেই হল প্রভোস্ট বা প্রক্টরিয়াল বডিকে না জানানো।  দ্বিতীয় ভুল যারা ওই হলের স্টেকহোল্ডার না, তারা সমন্বয়কদের সঙ্গে কোঅপারেশন না করে সেখানে গিয়েছে। সর্বোপরি এ সকল ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি ও প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মাঝে বিদ্যমান বিভাজন দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।”

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “আমি প্রক্টরকে বলেছি, এ বিষয়ে প্রক্টর যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”

Link copied!