• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কমেছে অতিথি পাখি


হাবিবুর রহমান সাগর, জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪, ০৭:৩৪ পিএম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কমেছে অতিথি পাখি
এ বছর অতিথি পাখির সংখ্যা তুলনামূলক কমে গেছে। ছবি : প্রতিনিধি

শীতের মৌসুমে হিমালয়ের অঞ্চল থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতি বছর ঝাঁকে ঝাঁকে আসে অতিথি পাখি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো ভরে ওঠে পাখিদের আনাগোনায়। অপার সৌন্দর্যে মুখরিত থাকে ক্যাম্পাস।  

তবে এ বছর অতিথি পাখির সংখ্যা তুলনামূলক কমে গেছে। বিগত বছরগুলোর তুলায় ৯০ শতাংশ কম পাখি এসেছে জাবি ক্যাম্পাসে।

পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাবিতে পাখিদের বসবাসের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এখানকার দুটি জলাশয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সড়কের পাশে অবস্থিত। এতে দর্শনার্থীদের উৎপাত বেশি হয়। পাখি দেখতে গিয়ে দর্শনার্থীদের কেউ ঢিল ছোড়েন, কেউ দেন হাততালি। লেকের পাড়ে কাঁটাতারের বেড়া না থাকা, লেকপাড়ে যানবাহন পার্কিং করা, জলাশয়ের কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিষ্কার না করার কারণে এখানকার পরিবেশ পাখিদের বিচরণের আর উপযোগী নয়। এ ছাড়া জলাশয়ে চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল ফেলেন দর্শনার্থীরা।

ছোট-বড় মিলিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোট ২৬টি লেক রয়েছে। প্রতিবছর শীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে দেখা যেত অসংখ্য পাখির আনাগোনা। সবচেয়ে বেশি পাখির দেখা মিলতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন চত্বরের পাশের লেকে। এ ছাড়া বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন জয়পাড়া লেক, রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের পেছনের লেক, পুরাতন কলাভবন সংলগ্ন লেকেও তাদের আধিক্য থাকতো চোখে পড়ার মতো।

কিন্তু বেশিরভাগ জলাশয় ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপানায় প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। কিছু জলাশয়ে পানি থাকলেও জলজ আগাছায় ছেয়ে গেছে। যেগুলোতে পাখি বসবাসের উপযোগী নয়। তবে গত নভেম্বর মাসে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের পশ্চিম পাশের লেকে এবং সংরক্ষিত ডব্লিউআরসির পুকুরে ৫ শতাধিক অতিথি পাখি এসেছে। সেখানে পাখি দেখতে নিয়মিত ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, শীতে দুই ধরনের পাখি এসে থাকে ক্যাম্পাসে। একধরনের পাখি ডাঙার, অন্য প্রজাতি পানিতে থাকে। এদের বেশিরভাগই হাঁসজাতীয়। এরমধ্যে নাকতাহাঁস, খুনতেহাঁস, জিরিয়াহাঁস, ভুতিহাঁস, লেঞ্জাহাঁস, আফ্রিকান কম্বডাক, ছোট সরালি, বড় সরালি, পাতারিহাঁস, গ্রেটার স্টর্ক, ফুলুরিহাঁস এবং ইউরেশিয় সিঁথিহাঁস, গারগেনি, রাইনেক, খঞ্জনা, টাইগা, শামুক খোল, জলপিপি, ডাহুক উল্লেখযোগ্য।

১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম জাবিতে অতিথি পাখি আসে। সেবার ৪ হাজারের মতো পাখির দেখা মেলে। গতবছর এই সময়ে দেশি-বিদেশি প্রায় আড়াই হাজার পরিযায়ী বা অতিথি পাখি আসে। এর আগে, ২০২১ সালে মোট ৪ হাজার ৫০০ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অতিথি পাখি আসে ২০২০ সালের কারোনার মৌসুমে। সেবার ৮ হাজারের বেশি অতিথি পাখি এসেছিল। ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আসা মোট পাখির সংখ্যা যথাক্রমে ৬ হাজার ৭৮০, ৪ হাজার ৭৩১, ৪ হাজার ৯৭৫, ৪ হাজার ৭০৯টি ছিল বলে জানিয়েছে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।

সাধারণত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে জাবির লেকগুলোতে অতিথি পাখি আসা শুরু করে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ জলাশয় পরিণত হয় অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে। তবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক অতিথি পাখি তুষারপাতের ফলে সাইবেরিয়া, চীনের জিনজিয়াং, মঙ্গোলিয়া, নেপাল থেকে আসে বলে জানা যায়।

পাখি বিশেষজ্ঞ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল হাসান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও শীত কম থাকার কারণে পাখিদের আগমন কম দেখা যাচ্ছে। তবে পাখির নিরাপদ আবাসস্থলের ব্যবস্থা না থাকাটাও এর জন্য দায়ী। পাখির সুরক্ষায় লেক সংস্কার, দর্শনার্থীদের উৎপাত বন্ধে প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।”

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ব্যবস্থাপনা শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান বাবুল বলেন, “অন্য বছরগুলোতে অতিথি পাখির আগমনে জলাশয় ও লেক সংস্কারের জন্য কিছু অর্থের বরাদ্দ থাকতো। এ বছর কোনো টাকা বরাদ্দ না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তারপরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা কাজ করছি।”

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর

Link copied!