নতুন বছরের প্রথম দিন। অন্য বছরের মতো এবারও এদিন সারা দেশে বই উৎসব করতে যাচ্ছে সরকার। যদিও নির্বাচনের কারণে অন্যান্য বছরের মতো জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন নেই। তবে কুয়াশা ঢাকা সকালে খালি হাতে বিদ্যালয়ে যাবে কচিকাঁচার দল। তারপর নতুন বই হাতে নিয়ে নেবে ঘ্রাণ। বইয়ের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হবে, আনন্দে নেচে উঠবে তাদের মন।
২০১০ সাল থেকে শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের বই তুলে দেওয়ার সরকারের এই উদ্যোগটি ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। ১৩ বছরে সোয়া চার কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি বই, যা সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বিরল দৃষ্টান্ত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১০ সাল থেকে বই উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন ঘটা করে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে বই তুলে দেওয়া হয়। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর উৎসব না হলেও বিনামূল্যে বই ঠিকই পেয়েছে দেশের সব শিক্ষার্থী। রাজধানীসহ দেশের সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সব স্কুলেই বছরের প্রথম দিন বিতরণ করা হবে নতুন বই। টানা ১৩ বছর এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়াকে মাইলফলক হিসেবে মন্তব্য করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১ জানুয়ারি প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়ে বই উৎসব উদযাপন করা হবে। মিরপুর-২ নম্বরে ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়ে বইয়ের বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
মাধ্যমিকে কেন্দ্রীয়ভাবে বই বিতরণের অনুমতি দেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে স্কুলে স্কুলে বই উৎসব করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল খায়ের।
এর আগে, রোববার সকালে গণভবন থেকে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বই ছাপানো ও বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে এসএসসি ও সমমান পর্যন্ত ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই দেওয়া হবে। বই পাবে প্রাক্-প্রাথমিকের ৩০ লাখ ৮০ হাজার ২০৫ জন এবং প্রাথমিক স্তরের ১ কোটি ৮২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮৪ জন শিক্ষার্থী। এই স্তুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৮৫ হাজার ৭২২ জন এবং ইবতেদায়ির প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩০ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৮ জন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। প্রাথমিক স্তুরের শতভাগ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানান এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম।
এনসিটিবি জানিয়েছে, মাধ্যমিকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ১ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ১০৭ জন, দাখিলের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৮ জন, ইংরেজি ভার্সন ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন, কারিগরির ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৫২ জন, দাখিল ভোকেশনালের ৬ হাজার ১৫ জন ও ব্রেইল পদ্ধতির ৭২৪ জন নতুন বই পাবে। সর্বমোট ৩ কোটি ৮১ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন শিক্ষার্থী পাবে বিনামূল্যে নতুন বই।
জানা গেছে, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে এবার নতুন কারিকুলামে বই যাবে। এই বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরিতে দেরি হওয়ায় এই দুটি বইয়ের ছাপা কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। তাই এই দুটি শ্রেণির বই পেতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই প্রায় শতভাগ উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিকের কোনো শিক্ষার্থী হয়তো দুই শ্রেণির বই পাবে না, কিন্তু একদম খালি হাতে ফিরে যাবে না।
এ ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকের শতভাগ এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শতভাগ বই ছাপিয়ে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অষ্টম ও নবম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক এবং বিজ্ঞান বইয়ের পাণ্ডুলিপি আমরা কেবল হাতে পেয়েছি। এসব বইও দ্রুত ছাপানো শুরু হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন বছরের প্রথম দিনে সব শিক্ষার্থীর কাছে বই তুলে দিয়ে ‘বই উৎসব’ উদযাপন করছে সরকার। বর্তমান সরকারের টানা তিন মেয়াদে সাফল্যের অন্যতম একটি জায়গা হলো সময়মতো সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া। রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে শুরু করে করোনাভাইরাসের মতো মহামারির মধ্যেও সময়মতো সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দিয়েছে সরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪৫০ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে। এসব পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও মুদ্রণে সরকারের ব্যয় হয়েছে মোট ১১ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা।