জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল নিপীড়নসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত বিচারসহ চারদফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে শহীদমিনার সংলগ্ন রাস্তায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত শিক্ষক ও ছাত্রদের শাস্তিসহ চার দফা দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো- অছাত্রদের হল থেকে বের করতে হবে, প্রক্টর ও প্রভোস্টকে পদত্যাগ করতে হবে, যৌন নিপীড়ক জনিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে এবং ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সনদ বাতিল ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. পারভীন জলি বলেন, “অনেকেই ভাবছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ইতোমধ্যে অনেক দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু তা সঠিক নয়। আমাদের প্রথম যে দাবিটি ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে সকল অছাত্রদের বের করতে হবে। কিন্তু পাঁচ দিন সময়ের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন এখন পর্যন্ত এই ২৫০০ অবৈধ ছাত্রদের কোনো তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। তাহলে বাকি দুইদিনে কীভাবে তাদের হল থেকে বের করবেন। আমরা বলেছিলাম এই বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে ধর্ষণের মামলাটি করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোনো মামলা করেনি, শুধু একটা জিডি করেছেন। আমরা চেয়েছিলাম ধর্ষক শিক্ষার্থীর সনদ বাতিল করা হোক। কিন্তু তাও অস্থায়ী বাতিল করা হয়েছে।”
জলি বলেন, “ধর্ষণে যারা সহযোগী তাদের বিচারেও গড়িমসি করছে এই প্রশাসন। উপাচার্য বারবার বলেন ‘আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি’। কমিটমেন্ট দেন কিন্তু তা আর ফলোআপ করা হয় না, যেমনটি মাহমুদুর রহমান জনির ক্ষেত্রে হয়নি। প্রায় দেড় বছর পার হয়েছে এখন পর্যন্ত তার কোনো বিচার হয়নি। তাছাড়া যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার প্রধান করা হয়েছে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে। তাহলে এই তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষ হবে কীভাবে। তদন্ত কমিটিতে অন্য যে দুজন রয়েছেন তারাও রাজনৈতিক দলের এবং উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ। আপনারা জানেন যে ধর্ষককে যারা পালাতে সাহায্য করেছে তারা ছাত্রলীগের কর্মী। কিন্তু এই প্রক্টরই মোস্তাফিজকে খুঁজে আনতে পাঠিয়েছিলেন দুজন ছাত্রলীগের কর্মীকে। তাহলে প্রক্টোরিয়াল টিমের কাজ কী? তাদের উচিত ছিল এমএইচ হলকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে মোস্তাফিজকে আটক করা। কিন্তু পাঠানো হয়েছে দুজন ছাত্রলীগের কর্মীকে। এখান থেকেও বোঝা যায় প্রক্টরের কোনো স্বদিচ্ছা ছিল
না, তাদের আটক করার। এই প্রক্টর সকল প্রকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন তার পদে বহাল থাকার।”
জলি আরও বলেন, “এর আগে এমএইচ হলে একজন ছাত্র প্রত্যয় আন্দোলন করেছিলেন হল থেকে অছাত্রদের বের করে দেওয়ার জন্য। সেসময় প্রভোস্ট মুচলেকা দিয়েছিলেন তিনি অছাত্রদের বের করে দেবেন হল থেকে। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীকেও ওখান থেকে বের করা হয়নি। আজ যদি তিনি অবৈধ শিক্ষার্থৌদর হল থেকে বের করতেন তাহলে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটতো না। তাহলে প্রভোস্টও তার দায় এড়াতে পারেন না। আমরা তার শাস্তি চাই। তার স্বপদে থাকার কোনো অধিকার নেই। তাদের শুধু পদ থেকে সরালেই হবে না, তাদের রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তি দিতে হবে ধর্ষণে সহযোগিতা করার জন্য।”
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ ভূঁইয়া, অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অধ্যাপক রায়হান রাইন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আরেফিন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আইরিন আক্তার, নুরুল আলম, সোহেল আহমেদ, সোহেল রানা, মনোয়ার হোসেন তুহিন, রনি, বোরহান উদ্দীন সহ প্রায় ২০ জন শিক্ষক ও শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী।