• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্লাসে সিট ফাঁকা রেখে ফুলের তোড়া, আন্দোলনে নিহত সহপাঠীকে স্মরণ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২৪, ০৬:৩৫ পিএম
ক্লাসে সিট ফাঁকা রেখে ফুলের তোড়া, আন্দোলনে নিহত সহপাঠীকে স্মরণ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় মিরপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪ আগস্ট মারা যায় শফিক উদ্দিন আহম্মেদ আহনাফ (১৭)। সে রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

রোববার (১৮ আগস্ট) দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন বিএএফ শাহীন কলেজে পরীক্ষা দিতে আসে আহনাফের সহপাঠীরা। নির্ধারিত সময়ে প্রত্যেকেই নিজ নিজ সিটে গিয়ে বসে।

তবে ক্লাসরুমের একটি সিট তখনও ফাঁকা। যেখানে বসতো আহনাফ। তবে সেই টিসে রাখা ছিল একটি ফুলের তোড়া। তাতে রাখা একটা কাগজে লেখা ‘শফিক উদ্দিন আহম্মেদ আহনাফ’।

কোটা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া আহনাফের স্মরণেই সিটটি ফাঁকা রাখে সহপাঠীরা। আর বিভিন্ন ধরনের রঙিন ফুল দিয়ে তৈরি তোড়া রেখে দেয় তাকে সম্মান জানাতে।

বিএএফ শাহীন কলেজের ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, “আহনাফ একজন বীর। ওর জায়গা কেউ নিতে পারবে না। আমরা ওকে বীর হিসেবেই মনে রাখব। এ ভাবনা থেকেই ওর আসনে ফুলের তোড়া রেখেছিলাম।”

শিক্ষক বোরহান উদ্দিন বলেন, “একাদশ শ্রেণির হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষার সময় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। সহপাঠীরা বোঝাতে চেয়েছে, আহনাফের ত্যাগ ভুলে যায়নি। আহনাফ তাদের স্মৃতিতে রয়ে গেছে। চিরদিনই থাকবে।”

কী ঘটেছিল সেদিন
রাজধানীর মধ্য পাইকপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকত আহনাফ। ২০২৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল তার। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে বাবা-মা বার বার বার আন্দোলনে যেতে নিষেধ করলেও সে শুনত না।

ঘটনার দিন গত ৪ আগস্ট। বাইরের পরিস্থিতি ভালো না থাকায় সকাল থেকেই আহনাফকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করছিলেন বাবা-মা। তবে আহনাফ কারো কথাই শোনেনি।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল আহনাফ। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকেও ফোনে আহনাফ তার মাকে জানিয়েছিলেন সে মিরপুর ১০ নম্বরে আছে। আর সেটাই ছিল আহনাফের সঙ্গে তার মায়ের শেষ কথা।

তারপর...
একটি অচেনা নম্বর থেকে আহনাফের পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন আসে। ফোন পেয়েই মিরপুরের ইসলামিয়া হাসপাতালে ছুটে যান সবাই। সেখানে পৌঁছলে এক ব্যক্তি আন্দোলনে মারা যাওয়া কয়েকজনের ছবি দেখান তাদের। সেই ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছবি ছিল আহনাফের।

এরপর আহনাফের পরিবারের সদস্যদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলা হয়। সেখানে গিয়ে মর্গে আহনাফের লাশ দেখতে পান। পরে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাদির কবরে আহনাফকে দাফন করা হয়।

আহনাফের ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা শেষ করে ব্যবসা করবে। পাশাপাশি গানের ব্যান্ড গড়ে তোলারও ইচ্ছা ছিল তার। ক্লাসের সহপাঠীরা আহনাফকে না পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। 

Link copied!