বছরের শুরুটা খুবই সাধারণভাবে হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা খাতে নানা পরিবর্তন এসেছে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল শিক্ষা খাতেও। এবার এইচএসসি পরীক্ষার ধরণ পরিবর্তনসহ নানা পরিবর্তন এসছে শিক্ষা খাতে। পরিবর্তন হয়েছিল কারিকুলামেও। বছরজুড়ে শিক্ষা খাতে নানা ঘটনা তুলে ধরা হলো—
পাঠ্যবইয়ে যত পরিবর্তন
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বইয়ে নানা পরিবর্তন এসেছে। থাকছে না সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তার উদ্ধৃতি। নতুন করে যুক্ত হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি।
পরিমার্জনের মাধ্যমে বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতিফলন থাকছে। এ ছাড়া বইয়ে পুরনো টেন্ডারও বাতিল করা হচ্ছে। তবে যেহেতু এবার বছরের প্রায় শেষ প্রান্তে বইয়ের পুরনো টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার আহ্বান করা হয়। তাই বিনা মূল্যের পাঠ্য বই ছাপাতে কিছুটা বিলম্ব হবে বলে জানানো হয়।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানিয়েছেন, একটি দেশকে বই ছাপানোর জন্য টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল, গত ৫ আগস্টের পরে তা বাতিল করা হয়েছে। নতুন বইয়ে বেশ কিছু সংস্কার ও সংযোজন করা হচ্ছে। যে কারণে বই ছাপাতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
পুরোনো টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডার ও সংস্কারের কারণে গত বছরগুলোর মতো আগামী ১ জানুয়ারি বই উৎসব হচ্ছে না। তবে জানুয়ারি মাসের মধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
বাতিল হচ্ছে ২০১০ সালের শিক্ষানীতি
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ২০১০ সালে গৃহীত শিক্ষানীতিকে ‘অনুপযোগী ও অবাস্তবায়নযোগ্য’ বলছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নে শিগগিরই আরেকটি শিক্ষা কমিশন গঠন করা হবে।
স্বাধীনতার পর থেকে দেশে প্রণয়ন করা ছয়টি শিক্ষানীতি সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে বাতিল হয়েছে। এবারও পুরোনো শিক্ষানীতি বাতিল করে নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা বর্তমান শিক্ষানীতি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শিগগিরই একটি নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়নের জন্য একটি নতুন শিক্ষা কমিশন ঘোষণা করা হবে। আমরা নিশ্চিত যে এই কমিশন একটি চমৎকার কাজ করবে।”
২০১০ সালের শিক্ষানীতি বাতিলের সম্পর্কে অধ্যাপক আমিনুল বলেন, “এটা সম্পূর্ণ অনুপযোগী এবং এতে কোনো লাভ হবে না। বর্তমান শিক্ষানীতির অনেক বড় একটা অংশ বাস্তবায়িত হয়নি, যা প্রমাণ করে যে এটি ‘অবাস্তবায়নযোগ্য’।”
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘মিড ডে মিল’ চালুর সিদ্ধান্ত
উপবৃত্তিসহ প্রাথমিক শিক্ষার অন্যান্য সমস্যাগুলোও পর্যায়ক্রমে সমাধানে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া কমাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ’মিড ডে মিল’ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তবর্তী সরকার। প্রথম পর্যায়ে ১৫০টি উপজেলার সব স্কুলে এই ‘মিড ডে মিল’ চালু হবে।
পাঠ্যবইয়ের পাতা ছিঁড়ে আলোচনায় আসিফ মাহতাব
২০২৪ সালের সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ‘শরীফ থেকে শরীফা’র গল্পের পাতা ছিঁড়ে প্রতিবাদ করেছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব। ঘটনাটি ঘটে ২২ জানুয়ারির। এতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত হন তিনি।
ঘটনার দিন রাতেই তিনি নিজের ফেসবুকে এ-সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটাস দেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে আসিফ মাহতাব লেখেন, “আজকে আমি ব্র্যাকে রেগুলার ক্লাস নিয়েছি। আমাকে (রাত ১১টা) এইমাত্র ফোন করে জানানো হয়েছে, আমি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ক্লাস না নিতে না যাই। আমি জানি না, হঠাৎ কেন তারা এই সিদ্ধান্ত নিলো। আমাকে কোনো কারণ জানানো হয়নি।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির জনসংযোগ কর্মকর্তা ফাতিয়াস ফাহমিদ গণমাধ্যমকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে। কেন তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তার পূর্ণাঙ্গ আনুষঙ্গিক ব্যাখ্যা দেওয়া হবে।