সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারের দাবিতে টানা ৮ দিন ধরে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দাবি আদায়ে শিক্ষকরা অনঢ় থাকার কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি।
সোমবার (৮ জুলাই) টানা অষ্টম দিনের মতো ঢাবির কলা ভবনের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন শিক্ষকরা।
শিক্ষকরা বলেন, দাবি আদায়ের জন্য শিক্ষকরা কেন আন্দোলনে নামবে? শিক্ষকদের তো আন্দোলনে নামার কথা নয়। শিক্ষকরা থাকবে ক্লাসরুমে। তাদের জায়গা ল্যাবে। গবেষণা নিয়ে শিক্ষকরা ব্যস্ত থাকবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে হয়েছে বিপরীত। দাবি আদায়ের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।
কর্মবিরতিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, “স্টেকহোল্ডার হিসেবে তো আমাদেরকেও রাখা উচিত ছিল। কিন্তু কোনো অপশক্তি, যারা কোনো আলোচনা ছাড়াই এই স্কিম প্রবর্তন করে। তারা চায় সরকার ও শিক্ষকদের মুখোমুখি করতে।”
উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্ট্যাডিস বিভাগের শিক্ষক সানজিদা আক্তার বলেন, “এমন একটা দিনের জন্য আমরা এখানে সমবেত হচ্ছি, ভবিষ্যতে আমাদের ছাত্রছাত্রী যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করবেন তারা কি আর আসবেন এখানে? আমাদের বন্ধুরা অনেকে বিসিএস ছেড়ে এখানে শিক্ষকতা করতে এসেছেন। প্রত্যয় স্কিম চালু হলে কি এটি আর থাকবে? কেউ কি আসবে?”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, “অত্যন্ত বেদনা নিয়ে আমরা এখানে উপস্থিত হচ্ছি। সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে আমরা বৈষম্যের শিকার। ‘প্রত্যয় স্কিমের’ মতো একটি বৈষম্য আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। দিনে দিনে আমাদের তরুণ শিক্ষকদের উপস্থিতি বাড়ছে এটি আশার দিক। অষ্টম দিনেও আমরা সরকার থেকে ডাক পাইনি। পেলেই আমরা তাদের সঙ্গে বসব। তারা যদি এটি বুঝেন তাহলে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তারা না বুঝলে এই আন্দোলন দীর্ঘ হবে। দলমত নির্বিশেষে চলা এই আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হওয়ার নয়।”
চলমান এই আন্দোলনকে কেবল প্রত্যয় স্কিম বাতিলের নামে অভিহিত করা হলেও তাদের দাবি তিনটি। তা হলো প্রত্যয় স্কিম বাতিল করা, সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি, স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। ২০১৫ সালের শিক্ষক আন্দোলনেও এই দাবি ছিল। তবে তখন শিক্ষকরা দীর্ঘ আন্দোলনের পর ক্লাসে ফিরলেও আদায় হয়নি সেবারের দাবি। ৯ বছর পর প্রত্যয় স্কিম ইস্যুতে এবার ফের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মার্চ সরকার সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয় স্কিম ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে ২০ মার্চ শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করে। পরে ২৮ মার্চ দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। এরপর ২৫ থেকে ২৭ জুন আধাবেলা কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকেরা। দাবি না মানলে ৩০ জুনের পর সর্বাত্মক ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১ জুলাই থেকে টানা কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।