দেশের কওমি মাদ্রাসায় ছাত্রলীগকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। একইসঙ্গে দেশের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকেও কওমি মাদ্রাসায় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে কওমি শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করাতে একটি সেল গঠন করে ছাত্রলীগ ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে রাখার আহ্বান জানান নওফেল।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাজধানীর বকশিবাজারে সরকারি আলেয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ আয়োজিত গ্রিন, ক্লিন ও স্মার্ট ক্যাম্পাস বিনির্মিাণে বৃক্ষরোপণ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম (বাপ্পি) ও সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডুসহ অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিতি ছিলেন।
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “কিছু কিছু রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে কওমি মাদ্রাসাগুলোতে তাদের ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম চালাচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দল পরিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ছাত্র সংগঠন নিয়েও কাজ করছে। রাজনৈতিকভাবে মতাদর্শের দিক থেকে তারা দেশের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে যাতে বিচ্যুত না হয়, তাই কাউন্সেলিং করার জন্য বিশেষ সেল গঠন করা উচিত।”
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাগরিক চিন্তা-চেতনা যদি তৈরি করতে না পারি, তাহলে পরিণত বয়সে গিয়ে সেটা যথাযথভাবে হয় না। ছাত্রলীগ মূল্যবোধের বিষয়ে কাজ করছে। মহান স্বাধীনতার অঙ্গীকার ও প্রত্যাশা পেয়েছি বাংলাদেশ স্বাধীন করার মাধ্যমে। জাতির পিতা সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, সেটার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া, পাশাপাশি নাগরিক হিসেবে আমাদের যে দায়িত্ব সেটা মেনে চলা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা মেনে চলা, পরিবেশের বিষয়টি মেনে চলার কাজটি সবাই যেন করতে পারি।”
শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ তৈরির আহ্বান জানিয়ে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “মূল্যবোধের জায়গায় আমি বলব, ছাত্রলীগ আলেয়া মাদ্রাসাগুলোয় সাংগঠনিক কার্যক্রম করছে সেটা খুবই ভালো বিষয়। আলেয়া মাদ্রাসা শিক্ষা আমাদের মূল ধারার শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে এখন বেশ সমপর্যায়ে এসেছে। এখন মাদ্রাসাগুলো যেন বেশি করে আরবি ভাষা শেখায়, শিক্ষার্থীরা দেশবিদেশে চাকরির যোগ্য হয়, পাশাপাশি এই দক্ষতার জায়গায় উন্নত হবে এবং মূল্যবোধ ও আদর্শের জায়গায়ও। দক্ষতার সঙ্গে আদর্শ যদি না থাকে সেটা বিপজ্জনক। সেই দক্ষতা তখন আদর্শবিরোধী কাজে ব্যবহৃত হবে।”
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “নারীর প্রতি সহনশীলতার দৃষ্টি, অন্যান্য ধর্ম বা সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা, ধর্ম নিরপক্ষেতার জন্য আমাদের মানসিকতা তৈরি করা, মাদ্রাসার অবশ্যই সেটা করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক, ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ গঠনের সঙ্গে দ্বীনি ইসলামের যে শিক্ষা তাতে কোনো সাংঘর্ষিক বিষয় নেই। এটি অপপ্রচার করে কিছু ধর্মব্যবসায়ী, এভাবে দ্বীন ইসলামকে কলুষিত করার জন্য এটি তারা করছে। রাজনীতি করার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করছে। ইসলামের কোথাও বলা নেই, পবিত্র কুরআন শরীফের কোথাও বলা নেই যে, ধর্মীয় তত্ত্ব দিয়ে রাষ্ট্র চলবে।”
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আরও বলেন, “ব্যক্তি যেভাবে তার ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে যেতে পারে না। আমরা দেখেছি এগুলোকে অনেকভাবে অপপ্রচার করা হয়েছে। তাই এবারের কারিকুলামে সতর্কতার সঙ্গে যেখানে অপ্রচারের সুযোগ আছে, অবশ্যই আমাদের ধর্মবিশ্বাস, শুধু ইসলাম ধর্মীয় বিষয়ে নয়, অন্যান্য ধর্মেরও যে বিশ্বাস আছে, সেগুলোর প্রতি কোনো বিভ্রান্তিকর কিছু থাকলে সেটা পরিবর্তন করব, সংশোধন করব, এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে কারিকুলাম আছে।”