কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ক্যাম্পাসে একাডেমিক ও আবাসিক এলাকায় রয়েছে অন্তত ২২টি দোকান। এসব দোকানগুলোতে দুটি কোম্পানির প্রতিনিধি গিয়ে সিগারেট সরবরাহ করে থাকেন। এরমধ্যে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি করে থাকে ছয় ব্র্যান্ডের ১৪ ধরনের সিগারেট। আর জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল তিন ব্র্যান্ডের সাত ধরনের সিগারেট বিক্রি করে থাকে।
ব্রিটিশ-আমেরিকান ও জাপান টোব্যাকো দুই কোম্পানি মিলে দোকানগুলোতে প্রতিমাসে গড়ে সরবরাহ করে ২৪ লাখ টাকার সিগারেট। যার খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা। স্বাভাবিক দিনগুলোতে গড়ে পৌনে এক লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি হয়। আর বিশেষ দিনগুলোতে সিগারেট বিক্রি বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকার। হিসাব মতে, দিনে গড়ে লাখ টাকার সিগারেট বিক্রি হচ্ছে ইবি ক্যাম্পাসে।
দুই কোম্পানির প্রতিনিধি, বিক্রেতা বা দোকানি এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাসে গড়ে প্রায় আড়াই লাখ শলাকা সিগারেট সরবরাহ করে কোম্পানি দুটি। মুদি দোকানগুলোতে অন্যান্য পণ্যের তুলনায় সিগারেট বেশি বিক্রি হয়। এসব দোকানে দৈনিক বিক্রির ৫৫-৬০ শতাংশই আসছে সিগারেট থেকে।
সময়ের সঙ্গে সিগারেট বিক্রি বেড়েই চলেছে। দোকানিরা বলছেন, ক্রেতাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ছাত্রীরাও রয়েছেন। ধূমপানের বিস্তারে ক্যাম্পাসে চাঙা হচ্ছে সিগারেটের বাজার।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইবি ক্যাম্পাসের আবাসিক হলের ডাইনিং ও অভ্যন্তরের খাবারের হোটেলগুলো মিলিয়ে প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ৬০ লাখ টাকার খাবার বিক্রি হয়। অথচ মুদি দোকানগুলোতে সিগারেট বিক্রি হয় প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো। ফলে হিসাব অনুযায়ী খাবারের তুলনায় অর্ধেক ব্যয় হয় ধূমপানে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর তাদের বেশিরভাগই ধূমপানে আসক্ত হচ্ছেন। ধূমপানকে তারা ‘আধুনিকতা’ হিসেবে দেখছেন। পাশাপাশি বন্ধু ও বড়ভাইদের দেখেও আসক্ত হচ্ছেন নবাগতরা। অনেকে শিক্ষকদের দেখেও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
ক্যানসার সচেতনতামূলক সংগঠন ক্যানসার অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. সাইফুল ইসলাম মুসা বলছেন, ‘সিগারেটে ৭০টিরও বেশি ক্ষতিকর কেমিক্যাল থাকে; যা ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ানোর সঙ্গে লিভার, কিডনি ও যৌনস্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভধারণজনিত সমস্যা হয়। এছাড়া হৃদরোগ, স্নায়ুবিক ও মানসিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। ফুসফুস ক্যানসারের ৮০-৯০ শতাংশের ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে ধূমপান।”
ইবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ‘হিরোইজম’ এর চিন্তা ও বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ধূমপানে যুক্ত হয় শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে কষ্ট লাগে যখন শুনি শিক্ষকরাও ধূমপান করেন। আগামীতে মাদকবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে ধূমপানকেও যুক্ত করবো।”
প্রসঙ্গত, প্রতিবছরই বাজেটে সিগারেটে বেশি করারোপ করা হলেও ব্যবহারে তার সুফল মেলে না। আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। তবে শুল্ক বাড়িয়ে সিগারেটের ব্যবহার হ্রাস করার কৌশল তেমন কার্যকর নয় বলেই মনে করছেন অনেকে।