ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের চারটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু হয়েছে, যা চলবে আগামী ২০ মার্চ পর্যন্ত। এ বছর মোট আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৯৬৫টি। গত বছরগুলোর তুলনায় ভর্তি পরীক্ষার নাম থেকে শুরু করে অনেক বিষয়ই সংস্কার করা হয়েছে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় থেকে চালু হওয়া অনলাইন ভর্তি কার্যক্রম চলবে আগামী ২০ মার্চ রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত অনলাইনের মাধ্যমে প্রার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার আবেদন এবং ফি জমা দিতে পারবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং অথবা ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি ব্যাংক সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে পারবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১ মার্চ) বিকাল ৬টা পর্যন্ত প্রায় অর্ধ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন। এখন পর্যন্ত ঢাবিতে ভর্তির জন্য ৬৫ হাজার ৩৭০ জন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে বিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে। এরপর রয়েছে কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ।
এবার প্রথমবারের মতো চারটি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইউনিটগুলো হচ্ছে- ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট’, ‘বিজ্ঞান ইউনিট’, ‘ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট’ এবং ‘চারুকলা ইউনিট’।
‘ক’ ইউনিটে আবেদন ও ভর্তির যোগ্যতা : এই ইউনিটে আবেদন ও ভর্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও কৃষিবিজ্ঞান শাখায় উচ্চমাধ্যমিক এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞান শাখায় আলিম ও IGCSE/O Level এবং IAL/GCE A Level পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যে প্রার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় (চতুর্থ বিষয়সহ) প্রাপ্ত জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম আট (মাধ্যমিক/সমমান এবং উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষায় আলাদাভাবে ন্যূনতম তিন দশমিক পাঁচ থাকতে হবে) আছে তারাই ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
তবে উচ্চমাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মানবিক ও বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থীরাও এই ইউনিটে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় (চতুর্থ বিষয়সহ) প্রাপ্ত জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম সাত দশমিক পাঁচ (আলাদাভাবে ন্যূনতম তিন) থাকতে হবে।
‘খ’ ইউনিটে আবেদন ও ভর্তির যোগ্যতা : এই ইউনিটের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ডের মানবিক শাখায় এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সাধারণ শাখায় আলিম ও IGCSE/O Level এবং IAL / GCE A Level পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী যাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় (চতুর্থ বিষয়সহ) প্রাপ্ত জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম সাত দশমিক পাঁচ (মাধ্যমিক/সমমান এবং উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষায় আলাদাভাবে ন্যূনতম তিন থাকতে হবে) আছে তারা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
তবে উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার শিক্ষার্থীরাও এই ইউনিটে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় (চতুর্থ বিষয়সহ) প্রাপ্ত জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল বিজ্ঞান শাখার জন্য ন্যূনতম আট (আলাদাভাবে ন্যূনতম তিন দশমিক পাঁচ) এবং বাণিজ্য শাখার জন্য ন্যূনতম সাত দশমিক পাঁচ (আলাদাভাবে ন্যূনতম তিন) থাকতে হবে।
‘গ’ ইউনিটে আবেদন ও ভর্তির যোগ্যতা : উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ও IGCSE/O Level এবং IAL/GCE A Level পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যে প্রার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় (চতুর্থ বিষয়সহ) প্রাপ্ত জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম সাত দশমিক পাঁচ। যাদের মাধ্যমিক/সমমান এবং উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষায় আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩ আছে তারা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
তবে উচ্চমাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বিজ্ঞান ও মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরাও এই ইউনিটে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় (চতুর্থ বিষয়সহ) প্রাপ্ত জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল বিজ্ঞান শাখার জন্য ন্যূনতম আট (আলাদাভাবে ন্যূনতম তিন দশমিক পাঁচ এবং মানবিক শাখার জন্য ন্যূনতম সাত দশমিক পাঁচ (আলাদাভাবে ন্যূনতম তিন) থাকতে হবে।
চারুকলা ইউনিটে ইউনিটের আওতায় চারুকলা অনুষদভুক্ত যে সকল বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদন করা যাবে তা ওয়েবসাইটে প্রদত্ত ইউনিটের ভর্তি নির্দেশিকায় বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষার যে কোনো শাখায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক /সমমান পরীক্ষায় (চতুর্থ বিষয়সহ) জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ছয় দশমিক পাঁচ হতে হবে (মাধ্যমিক/সমমান এবং উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষায় আলাদাভাবে ন্যূনতম তিন থাকতে হবে)।
মানবণ্টন : চারুকলা ইউনিট ছাড়া অন্যান্য ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৬০ নম্বরের MCQ এবং ৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। শুধুমাত্র চারুকলা ইউনিটের পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের MCQ এবং ৬০ নম্বরের অংকন পরীক্ষা নেওয়া হবে। চারুকলা ইউনিটের MCQ পরীক্ষা ৩০ মিনিট এবং লিখিত পরীক্ষা ৬০ মিনিট-এ অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য ইউনিটের MCQ পরীক্ষা ৪৫ মিনিট এবং লিখিত পরীক্ষা ৪৫ মিনিট-এ অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষায় মোট ১২০ নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এরমধ্যে ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বর এবং মাধ্যমিক/সমমান ও উচ্চ মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ওপর থাকবে ২০ নম্বর।
ভর্তি পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) ‘বিজ্ঞান ইউনিট’-এর জন্য জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৮ এবং আলাদাভাবে জিপিএ ৩ দশমিক ৫, কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট -এর জন্য জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৭ দশমিক ৫ এবং আলাদাভাবে জিপিএ ৩ দশমিক শূন্য, ‘ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিট’-এর জন্য জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৭ দশমিক ৫ এবং আলাদাভাবে জিপিএ ৩ দশমিক শূন্য এবং চারুকলা ইউনিট -এর জন্য জিপিএ-দ্বয়ের যোগফল ন্যূনতম ৬ দশমিক ৫ এবং আলাদাভাবে জিপিএ ৩ দশমিক শূন্য থাকতে হবে।
ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত নির্দেশনা ও তথ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট https://admission.eis.du.ac.bd-এ দেখা যাবে।
সময় সূচি : সব ইউনিটের পরীক্ষা বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। ‘চারুকলা ইউনিট’ ব্যতীত অন্য তিনটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা গতবারের মতো ঢাকাসহ আটটি বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে। চারুকলা ইউনিট দিয়ে এবার ঢাবির স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী ২৯ এপ্রিল। কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের (খ ইউনিট) পরীক্ষা আগামী ৫ মে অনুষ্ঠিত হবে। ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষা ১২ মে ও এর পরের দিন অর্থাৎ ১৩ মে ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে সকল ইউনিটেরই ভর্তি পরীক্ষা বেলা ১১টা থেকে শুরু হবে। আগামী ১৮ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ থেকে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের পরীক্ষা শুরুর ১ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করা যাবে।
আসন সংখ্যা : ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে সর্বমোট ৫ হাজার ৯৬৫ আসনের মধ্যে কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে দুই হাজার ৯৩৪টি, বিজ্ঞান ইউনিটে এক হাজার ৮৫১টি, ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটে এক হাজার ৫০টি এবং চারুকলা ইউনিটে ১৩০টি আসন রয়েছে।