• ঢাকা
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘শতভাগ সাক্ষরতা ছাড়া কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়’


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৩, ০৯:৩৯ পিএম
‘শতভাগ সাক্ষরতা ছাড়া কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়’
ছবি : সংগৃহীত

অনিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে নিবন্ধন নেওয়ার জন্য তিন মাস সময় দেওয়া হবে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, নিবন্ধন এবং অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া আর কোনো বেসরকারি পর্যায়ের প্রাথমিক বিদ্যালয় চলবে না। শুধু ইংলিশ মিডিয়াম ছাড়া কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি স্কুল এবং হাইস্কুলের সঙ্গে প্রাইমারিসহ সব বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন এবং অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া চালাতে পারবে না।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এক্ষেত্রে চেক লিস্টের ভিত্তিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসার অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতির জন্য তদন্ত করে রিপোর্ট দেবেন। এতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ৩০ দিন। আবেদন করার ৩০ দিনের মধ্যে আবশ্যিকভাবে তিনি তদন্ত করে চেক লিস্ট অনুযায়ী পাঠাবেন এবং জেলা প্রাথমিক অফিসার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত করে রিপোর্ট দেবেন এবং ডিপিও-র মাধ্যমে আমাদের ডিভিশনাল যে ডিডি আছেন তিনি নিবন্ধন দেবেন। এজন্য মন্ত্রণালয়ের আসতে হবে না, অধিদপ্তরেও আসতে হবে না। এখন যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয় (বেসরকারি) রয়েছে সেগুলোকেও নিবন্ধন নিতে হবে।

বর্তমানে যে স্কুলগুলো রয়েছে তার মাত্র ১০ শতাংশ নিবন্ধিত। বাকি ৯০ শতাংশ অনিবন্ধিত। অনিবন্ধিত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে তিন মাসের ভেতরে নিবন্ধন নিতে হবে। বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৪০ হাজারের বেশি স্কুল ছিল।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, “বর্তমান সরকারের নানামুখী কর্মসূচির কারণে পূর্বের তুলনায় সাক্ষরতার হার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনো প্রায় ২৩ দশমিক ২ শতাংশ জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। শতভাগ সাক্ষরতা অর্জন করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব নয়।”

প্রতিমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রজ্ঞা, মেধা আর দূরদর্শিতা দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন যে, সদ্য স্বাধীন দেশে মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে হলে জাতিকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হবে। তাই তিনি শিক্ষার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করে সংবিধানের ১৭নং অনুচ্ছেদে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করেন। সাক্ষরতা বিস্তারে আন্তর্জাতিক ফোরামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সাক্ষরতা দিবস উদযাপিত হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন তৎকালীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদান করেছে।”

শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সাক্ষর জ্ঞানদান, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকায়ন, দক্ষ মানবসম্পদে পরিণতকরণ, আত্ম-কর্মসংস্থানের যোগ্যতা সৃষ্টিকরণ এবং বিদ্যালয় বহির্ভূত ও ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষার বিকল্প সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সরকার উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন ২০১৪ প্রণয়ন করেছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি ৪) অর্জনের জন্য সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০২১-২০২৫) উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা খাতের জন্য তিনটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এগুলো হলো, ৩৩ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন কিশোর-কিশোরী ও বয়স্ক নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে মৌলিক সাক্ষরতা প্রদান করা, মৌলিক সাক্ষরতা অর্জনকারী ৫ মিলিয়ন নব্যসাক্ষরকে কার্যকর দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান করা ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডকে কার্যকর করা।

জাকির হোসেন বলেন, “স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সবার আগে প্রয়োজন সাক্ষরতা জ্ঞান। দেশের সব মানুষকে সাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করা গেলে ডিজিটাল প্রযুক্তি মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে। দেশের নিরক্ষর মানুষকে সাক্ষরতা জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মানবসম্পদে পরিণত করার দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকেও এগিয়ে আসতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, “অনেক দিন ধরে আমাদের প্রাথমিকের সমাপনীতে পরীক্ষা ছিল। ওইটার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আলাদা পরীক্ষা না নিয়ে বৃত্তি দেওয়া হতো। এটা ওয়ান কাইন্ড অব ইনসেনটিভ, অনুপ্রেরণা বা ছোট ছোট বাচ্চাদের ইন্সপায়ার করার জন্য।”

ফরিদ আহাম্মদ বলেন, “প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আর বৃত্তি দেওয়া হবে না। তবে ক্ষুদ্র অলিম্পিয়াড, বাংলা অলিম্পিয়াড বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড- এ ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এখন শিক্ষার যে পরিবর্তন হয়েছে এটা শুধু পরিমার্জন না, এটা একেবারে রূপান্তর হচ্ছে। রূপান্তরের কারণে ২০১০ সালে যে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ছিল; সেটা পুরো পরিবর্তন করে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ করা হয়েছে।”

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, “এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে আমরা একটি বৃত্তি পরীক্ষা নিয়েছিলাম। তারপর আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।”

ফরিদ আহাম্মদ আরও বলেন, “কোচিংমুখিতা নিরুৎসাহিত করার জন্য আমরা যে সাব-কমিটি করে দিয়েছি, তারা আমাদের কিছু সুপারিশ দিয়েছেন। আমরা তাদের আরও এক মাস সময় দিয়েছি। সেটি দিলে আমরা ওই দিকে যাব। কিন্তু আমরা বৃত্তি পরীক্ষা না নেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর

Link copied!