বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য যদি হতো আওয়ামী লীগকে এই দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে আবার চাঁদাবাজদের বসাব, তাহলে কেন রিকশাশ্রমিক, কেন একজন কৃষক, কেন একজন সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসেছিল আওয়ামী লীগকে প্রতিরোধ করার জন্য। সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করার জন্য। আমাদের লক্ষ্য যদি হতো একটি চাকরি পাওয়া, তাহলে কেন নবম-দশম শ্রেণির ছাত্ররা, চার-পাঁচ বছরের শিশুদের শহীদ হতে হয়েছে, সেই প্রশ্নের জবাব আপনাদের কাছে চেয়ে যাব।”
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আয়োজিত এক সভায় তিনি এ কথা বলেন।
স্মরণসভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি।
আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, “আপনারা ভেবে দেখবেন, আমরা এই আহ্বান করেছিলা, আমাদের ওপর হামলা করছে, আপনারা ঘর থেকে বের হয়ে আসুন, আপনারা অফিসে যাবেন না। তারা আমাদের কথায় সাড়া দিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বুক পেতে দিয়েছিল, শহীদ হয়েছিল। সেই লোকগুলোকে এখনো যদি রাস্তায় চলার ক্ষেত্রে চাঁদা দিতে হয়, আপনাদের যদি বাধা দেওয়ার সেই সাহসটা না থাকে, তাহলে এই বাংলাদেশ কখনো পরিবর্তন হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান শুধু ১৫ জন শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল। আর ২৪-এর গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে দুই হাজার মানুষের জীবনের বিনিময়ে। সেই দুই হাজার তাজা প্রাণের বিনিময়ে যদি নতুন বাংলাদেশ আমরা প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে আবার ২০ বছর পর, ৩০ বছর পর, আবার চার হাজার মানুষকে জীবন দিতে হবে। যেভাবে আমরা দুই হাজার জনের জীবনের জন্য দায়ী হয়ে থাকব, ঠিক একইভাবে পরবর্তী সময়ে প্রজন্মের যে চার হাজার জন জীবন দেবে, তার জন্যও দায়ী থাকব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতা জীবন বাজি রেখে রাজপথে লড়াই করেছে। এর মধ্যে অনেক তাজা প্রাণ ঝরে গেছে স্বৈরাচারের গুলির আঘাতে। শত মায়ের বুক খালি হয়েছে। হাজারো মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এত এত ত্যাগের লক্ষ্য ছিল সুন্দর একটি বাংলাদেশ। যেখানে আমরা মুক্তভাবে প্রাণখুলে নিজেদের অব্যক্ত কথাগুলো নির্ভয়ে প্রকাশ করতে পারব। যে কথাগুলো হবে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে এবং শোষণ, বঞ্চনা, বৈষম্য, ঘুষ, মাদকসহ সব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে।”
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগ।
এতে উপস্থিত হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মা–বাবা এবং আহত শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের দেয়ালিকা প্রদর্শন করা হয়।
এ ছাড়া আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সম্মাননা প্রদান এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।