• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৮ ভাদ্র ১৪৩১, ৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

অভিভাবকহীন শাবিপ্রবিতে সেশনজটের শঙ্কা


শাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২৪, ১০:০১ পিএম
অভিভাবকহীন শাবিপ্রবিতে সেশনজটের শঙ্কা

সরকার পতনের পর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বিভিন্ন দপ্তর ও আবাসিক হলের দায়িত্ব থেকে উপাচার্যসহ প্রায় ৮৩জন শিক্ষক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে পড়েছে অভিভাবকশূন্য।

গত রোববার (১৮ আগস্ট) থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও শাবিপ্রবিতে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে চলছে অচলাবস্থা। সেশনজটের শঙ্কায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীরা জানান, ২০২০ ও ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি, উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন, ২০২২ ও ২০২৪ সালের আকষ্মিক বন্যাসহ নানা কারণে সেশনজটের কবলে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। এছাড়া চলতি বছরের ঈদুল ফিতর, গ্রীষ্মকালীন ও ঈদুল আজহার ছুটি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে গত আট মাস ধরে চলছে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা। এর মধ্যে গত ৩ মাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এতে সেশনজটের কবলে পড়ে অনেকেই শিগগিরই একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার দাবি জানিয়েছেন।  

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা জসীম আশা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে আসা এখন অত্যন্ত জরুরি। এতদিনে আমাদের নতুন একটা সেমিস্টার শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন ও ঈদের ছুটি পরবর্তীতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের জীবন থেকে তিন মাসের অধিক সময় চলে গেছে।“

আশা আরও বলেন, “এসব কারণে সময়মতো গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন না হওয়ায় চাকরি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না শিক্ষার্থীরা। যারা উচ্চ শিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে চাইবে তাদেরও একটি সেশন হারাতে হচ্ছে। এছাড়া করোনা মহামারী আমাদের সকলের জীবন থেকে প্রায় দেড় বছর সময় নষ্ট করেছে। সিলেটের আকস্মিক বন্যার কবলেও অনেক সময় নষ্ট হয়েছে শিক্ষার্থীদের।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মখলিসুর রহমান (পারভেজ) বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটামের কারণে সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে জরুরি কিছু সেবার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরকে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা রাখতে সম্মতি দিয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ না দিলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজে সচলতা ফিরবে না বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি রমজান আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটামের প্রেক্ষিতে দাপ্তরিক কাজ বন্ধ রয়েছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে এসে ফিরে যাচ্ছেন।”

এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আল আমিন বলেন, “যেহেতু একটি সফল অভুত্থানের মাধ্যমে সরকরের পতন হয়েছে, তাই নতুন যে সরকার গঠন হয়েছে সেই সরকারকে সময় দিতে হবে। কারণ খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলে অবার একই মানুষই প্রশাসনিক কার্যক্রমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে আন্দোলনের কোনো সফলতা থাকবে না। তবে সরকারের কাছে আহ্বান থাকবে দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদগুলোতে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু করা হোক।”

শিক্ষার্থীদের সেশনজটের বিষয়ে এই অধ্যাপক বলেন, “যেকোনো বিপ্লব ও অভুত্থান পরিস্থিতির কারনে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট তৈরি হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা ও প্র্যাকটিক্যালে কম সময় দিয়ে সেমিস্টার সম্পন্ন করে, তাহলে এই জট কাটানো সম্ভব।”

Link copied!