ছেলেটি পতাকা হাতে ও মেয়েটি বাংলাদেশের সংবিধান হাতে নির্বাক দাঁড়িয়ে। প্রথম দেখাতেই মনে হবে, এ যেন স্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ণ এক প্রতিচ্ছবি। আসলেই তাই। দেখতে সাদামাটা মনে হলেও এর সঙ্গে জুড়ে আছে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের চেতনা ও বিজয়গাথার ইতিহাস।
বলছিলাম, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চেতনা-৭১’ এর কথা। যে নির্মাণটি শুধু শাবিপ্রবি নয়, পুরো সিলেট বিভাগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রথম কোনো স্থাপনা। এ নিয়ে সিলেট বিভাগের মানুষ ও শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্যরকম এক আবেগ কাজ করে।
জানা যায়, ২০০৫-০৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে নির্মিত এই ভাস্কর্যটিতে প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অর্থায়ন করে। এই অসাধারণ নির্মাণে অর্থায়ন করে অংশীদার হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। এতে নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০১১ সালের ৩০ জুলাই ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ উদ্দিন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভাস্কর্যটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ‘এ’ এর উত্তর-পশ্চিম পাশে তিন রাস্তার মোড়ের এক কর্নারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দেখলে মনে হবে যেন এক বাংলাদেশের পুরো পরিচয় বহন করে নির্বাক দাঁড়িয়ে আছে সিলেট বিভাগের প্রথম মুক্তিয্দ্ধুবিষয়ক নির্মাণটি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করা এই অসাধারণ ভাস্কর্যটির নকশা প্রণয়ন ও নির্মাণ করেন শিল্পী মোবারক হোসেন নৃপাল। তিনি ভাস্কর্যটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত একডেমিক ভবনের লাল ইটের সঙ্গে মিল রেখে ভিত্তি বেদি ও তিনটি ধাপ বানানো লাল ও কালো সিরামিকের ইট দিয়ে। নিচের ধাপে ১৫ ফুট, মাঝের ধাপে ১৩ ফুট ও ওপরের ধাপে ১২ ফুট। প্রতিটি ধাপের ব্যবধান ১০ ইঞ্চি করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে ভাস্কর্যটি একটি আবেগের নাম। এটি নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়গাথা ইতিহাসে পৌঁছে দেয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় বহন করে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনলেই এই ভাস্কর্যটির কথা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সিলেট ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা এটি দেখে বিমোহিত হন, এখানে ছবি তোলেন, আড্ডা দেন। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক মোমবাতি প্রজ্বালন করে থাকে এর বুকে।
এ বিষয়ে হেদায়াত আলী সাব্বির নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ভার্স্কয ও স্থাপত্য নিদর্শন একটি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। তেমনি বাংলাদেশের নানা প্রান্তে নানা ভার্স্কয ও স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে। যার মধ্যে শাবির ‘চেতনা ৭১’ একটি। এটি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বে গাথা ইতিহাসের বিমূর্ত প্রতীক, যা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে দেশ প্রেমের। উদ্বুদ্ধ করছে কঠিন মুহূর্তে দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ করতে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, “শাবিপ্রবিতে ঘুরতে আসার অন্যতম একটি কারণ হলো ‘চেতনা ৭১’। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যের এক প্রতিচ্ছবি। তা ছাড়া এটির সঙ্গে আমাদের মহান স্বাধীনতা ও বিজয়গাথার ইতিহাসজুড়ে আছে।