৪ বছর পর জবিতে মহালয়া উদযাপন


সোহানুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৪, ০৫:১৮ পিএম
৪ বছর পর জবিতে মহালয়া উদযাপন
জবিতে মহালয়া উদযাপন। ছবি : প্রতিনিধি

দুর্গাপূজা উৎসবের সূচনা মহালয়ার মধ্য দিয়ে পিতৃপক্ষ এবং দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ। এর মাধ্যমে দুর্গাপূজা উৎসবের সূচনা হয়। চার বছর পর এবার মহালয়ায় চন্ডীপাঠ, আগমনি গান, মহিষাসুরমর্দিনী ও প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে মহালয়া উদযাপন। দেবী দুর্গা এই দিন পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক-শিক্ষার্থী শুভ মহালয়া উদযাপন করেছেন।

বুধবার (২ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ একাডেমিক বিল্ডিংয়ের নিচ তলায় সনাতন ‘পরিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ এ মহালয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথমে শ্রী শ্রী চণ্ডীপাঠ এবং পর্যায়ক্রমে মায়ের আগমনি গান, মহিষাসুরমর্দনী ও সবশেষ প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

বাঙালিরা ঐতিহ্যগতভাবে দেবীমাহাত্ম্যম্ শাস্ত্র থেকে স্তোত্র পাঠ করতে মহালয়ার দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে। মহিষাসুরমর্দিনী নামে পরিচিত গান এবং মন্ত্রগুলির শোনার জন্য প্রত্যেক বাঙালি পরিবার ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে। এটি দেবী দুর্গার জন্ম এবং অসুর রাজা মহিষাসুরের ওপর তার চূড়ান্ত বিজয়ের বর্ণনা দেয়। পিতৃপক্ষে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা করে ‘জলদান’ বা তর্পণ করা হয় এবং পরলোকগত পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।

সনাতন বিশ্বাস অনুযায়ী, জীবিত ব্যক্তির পূর্বের তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোক বা যমলোকে বাস করেন। আর এই পিতৃলোকের অবস্থান স্বর্গ ও মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে। পিতৃলোকের শাসক মৃত্যু দেবতা যম। তিনি সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে নিয়ে যান। এরপর পরের প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে আগের প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেন। একই সঙ্গে পরমাত্মায় বা ঈশ্বরে বিলীন হন।

এ কারণে মহালয়ায় হিন্দুরা তাদের পূর্বে মারা যাওয়া তিন প্রজন্মের ব্যক্তিদের স্মরণ বা তর্পণ করে থাকেন। এ দিন শ্রদ্ধানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি দেন।

সনাতন আচার অনুযায়ী, মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব।

সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মিতু রানী দাস বলেন, “মহালয়া মূলত দেবীর আগমনের বার্তা দেয়। মহালয়া মাধ্যমে মা দুর্গা অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভশক্তির বার্তা নিয়ে মর্তের আসেন।”

হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্র বনিক বলেন, “মহালয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তথা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তিথি, যেটি দুর্গাপূজার সূচনা নির্দেশ করে। এই বিশেষ দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করার জন্য আমরা এই মহালয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।”

রসায়ন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী দেবানন্দ দেবনাথ বলেন, “মহালয়া শব্দটির আক্ষরিক অর্থ- মহান যে আলয় বা আশ্রয়। কিংবা, মহালয়াকে মহত্ত্বের আলয়ও বলা যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বলা হয়েছে, যে ক্ষণে পরমাত্মায় অর্থাৎ পরব্রহ্মে লয় প্রাপ্তি ঘটে সেটিই হল মহালয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পরলোকগত পিতৃ পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে থাকেন। সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব ‘শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গাপূজা’ আসন্ন। কৃষ্ণপক্ষ বা পিতৃপক্ষের অবসান এবং শুক্লপক্ষ বা দেবীপক্ষের সূচনায় অমাবস্যার একটি নির্দিষ্ট ক্ষণকে সনাতন ধর্মে বলা হয়ে থাকে মহালয়া।”

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উপমা মন্ডল বলেন, “একবছর অপেক্ষা করে থাকি দুর্গাপূজার জন্য। আর মহালয়ার দিন দেবীপক্ষের সূচনার মাধ্যমে অপেক্ষার অবসান ঘটে। ভোরে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের চন্ডীপাঠের মধ্যে দিয়ে মহালয়ার শুরু হয়।”

গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, “বিগত চার বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে মহালয়া উদযাপন হচ্ছে। এতে আমরা খুবই আনন্দিত। এ ধারা অব্যাহত থাকুক। আশা করছি, সামনে দুর্গাপূজাও অনুষ্ঠিত হবে।”

Link copied!