রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালে মাদক সেবন অবস্থায় কয়েকজন বহিরাগত যুবককে আটক করা হয়। পরে তিনজনকে অভিযুক্ত করে থানায় সোপর্দ করে বাকিদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ক্যাম্পাসের ভেতরে বহিরাগতদের প্রবেশ এবং মাদক সেবনের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। এছাড়া বিজয় দিবস উদ্যাপনে নানা অব্যবস্থাপনা ছিল বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও চরম অব্যবস্থাপনা ছিল। পুরো আয়োজন ঘিরে কোনো নিরাপত্তা বাহিনীর (পুলিশ বা সেনাবাহিনী) উপস্থিতি দেখা যায়নি। ফলে নিরাপত্তার অভাব নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও হতাশা দেখা দেয়। পাশাপাশি নামাজের বিরতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উপেক্ষা করে কনসার্ট চালিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে লোগো ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনিয়ম দেখা যায়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো রংপুর রাইডার্সের লোগোর ওপর বসানো হয়, যা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও ভাবমূর্তির অবমাননা হিসেবে দেখছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাত ৮টার পর উচ্চস্বরে গান বাজানো নিষেধাজ্ঞা দিলেও বিজয় কনসার্টে সেই নিয়মের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাউন্ড সিস্টেমের সীমা নির্ধারণ করেও তা মানা হয়নি এবং কোনো পর্যবেক্ষণ ছিল না।
এবারের বিজয় দিবসের আয়োজনে স্পনসর হিসেবে যুক্ত ছিল রংপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, তিস্তা ইউনিভার্সিটি। এ সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন, এই পদক্ষেপ বেরোবির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং এটি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পনসরশিপ গ্রহণ করে বেরোবির নিজস্বতা ও মর্যাদার পরিপন্থী।
এছাড়াও, কনসার্টে আমন্ত্রিত শিল্পী অন্তর রহমানকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অভিযোগ করেন, অন্তর রহমান একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সহযোগী নেতা হিসেবে কাজ করেন। তারা বলেন, “গণহত্যাকারী সংগঠনের সহযোগীকে আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে চাই না।” পরবর্তীতে শিল্পী অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি।
জাকিয়া পারভীন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কি এখন বাজেট নেই? তাও আবার বিজয় দিবসের মতো দিনে! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি বাজেটের এত অভাব হয়, তাহলে ছোট পরিসরে আয়োজন করলেই হতো। মর্যাদার সঙ্গে আপস করার প্রয়োজন ছিল না। যদি স্পনসর দরকারই হয়, তাহলে আরেকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কেন? আরও অনেক কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়া যেত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় দিবসের মতো একটি অনুষ্ঠানে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ সত্যিই হতাশাজনক।”
শিক্ষার্থী তানভীর মাহিদ বলেন, “বিজয় দিবস উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবেন ঠিক আছে। কিন্তু নামাজের সময়টা জেনে রাখবেন তো। এশার নামাজের জন্য ১৫/২০মি সময় দিতে পারতেন। মওলানা সাহেব ফরজ নামাজ পড়াচ্ছেন আর আপনাদের উচ্চ সাউন্ড সিস্টেম মসজিদের ভেতরে পরিস্কারভাবে শোনা যাচ্ছে। এটা আয়োজক পরিষদের কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। কাজটা পুরোপুরি খামখেয়ালিপনা ছাড়া কিছুই না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হানুল কবির বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে আমরাই যেন অতিথি। বহিরাগতরা প্রবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকের আখড়ায় পরিণত করেছিল। যারা আইন তৈরি করেছে, তারাই তা মানছে না। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চস্বরে অনুষ্ঠান করে তারা আমাদের জন্য অসহ্য পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এমন অব্যবস্থাপনা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।”
এ বিষয়ে বিজয় দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. তানজিউল ইসলাম বলেন, “নামাজের সময় সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ না রাখার বিষয়টি আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আজানের সময় সাউন্ড সিস্টেম বন্ধ ছিল। দর্শকদের আগ্রহের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে কনসার্ট শেষ করার সুযোগ হয়নি। আর মাদক সেবনকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোর ব্যাকগ্রাউন্ডে রংপুর রাইডার্সের লোগো থাকা নিয়ে তিনি বলেন, “আমি এইমাত্র শুনেছি। এটা আমার চোখ পড়েনি, আমি খেয়ালও করিনি এবং আমাকে কেউ জানাইওনি। এটা আমার সম্পূর্ণ অজানা ছিল। আর স্পনসরের বিষয়ে আমি জানি না ভিসি স্যার বলতে পারবেন।”
তিনি আরও বলেন, “ভিসি স্যার বলেছিলেন বিজয় দিবসটি আমরা সবাইকে নিয়ে উদযাপন করি। তাই সবাইকে নিয়ে আমরা করতে চেয়েছিলাম। আমাদের কিছু ভুল হয়েছে। সেগুলো আমরা ভবিষ্যতে লক্ষ্য রাখবো যেন আর না হয়। তবে আমাদের চেষ্টা ছিল তাই বড় ধরনের কোনো সমস্যা হয়নি।”