• ঢাকা
  • সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩০, ৩০ রমজান ১৪৪৬

হিমস্নাত সকালে রসের হাঁড়িতে একদিন


তানিম তানভীর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪, ০২:৪০ পিএম
হিমস্নাত সকালে রসের হাঁড়িতে একদিন

কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাত। পৌষের কনকনে হিমেল হাওয়ায় জুবুথুবু সবাই। রাতের অন্ধকারাচ্ছন্ন শহর, নগরের মানুষগুলো নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে শীতের চাদরে। তখনই মনের কোণে উঁকি দেয় মনোরম সকালের গাঁয়ের মেঠো পথে পথিকের হেঁটে চলা। ভাবতে থাকি ঝিরিঝিরি শিশিরের ছোঁয়ায় খেঁজুরের রস পান কেমন হয়! আহ! কি দারুণ বিষয়।

যেই ভাবা সেই কাজ। মধ্যরাতে সিদ্ধান্ত হয় আমরা নোফেলিয়ান যাবো ক্যাম্পাস সংলগ্ন ত্রিবেনি এলাকায়। বঙ্গবন্ধু পকেট গেইট থেকে সাড়ে ছয়টায় একটি ভ্যানে ৮ নোফেলিয়ানের যাত্রা। কত পথিক, একরজুড়ে হলুদ সর্ষের মৃদুমন্দ ঘ্রাণে মাতোয়ারা সকলের মন প্রাণ। মন খুলে আঞ্চলিক গানের মহড়া চলতে থাকে ভ্যানেই।

আমাদের সরব উপস্থিতির জানান দিতে একজন স্লোগান ধরলো- ‘তুমি কে আমি কে, নোফেলিয়ান-নোফেলিয়ান’। এরই মাঝে একজন কোরামের ভারত্বের জানান দিতে বলা শুরু করে নোয়াখালী-নোয়াখালী।

ঘন কুয়াশায় স্নান করে চুপসে আছে প্রকৃতির সবুজ পল্লব। সুবাসিত ঘ্রাণে যেন প্রাণ কেড়ে নেয়। দূর্বাঘাসে সোনালি মিষ্টি রৌদ্দুর আর ঝরা পাতার নৃত্যে প্রকৃতির এক অপূর্ব সাজ দেখতে দেখতে অবশেষে পৌঁছে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত জায়গায়। 

শীতের মৌসুমের সাথে খেঁজুর রসের দারুণ সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্কের মেলবন্ধনে আমাদের মতো শতাধিক শিক্ষার্থীও এসেছে খেজুর রস পান করতে। কুয়াশার আবছায়ায় উৎসবমুখর পরিবেশে কেউ রস পানে ব্যস্ত, কেউ ছবি তোলা, কেউ ভিডিও ধারণ আর কেউ বা রস পানের অপেক্ষায় সটান দাঁড়িয়ে।

মিষ্টান্নতায় ভরপুর সুমিষ্ট রস পান আর তাদের মুখখানা দেখে আমার আর তর সইছে না। গাছিয়াল মামাকে বললাম চট করে এক গ্লাস দেন তো! কাপের সংকট, মামা বলল। এরই ফাঁকে কিছু ছবি ও ভিডিও ধারণ করি। একজন বলল, How do you feel after drinking খেজুর রস? প্রশ্নের অনুভূতিতে বলেন, ‘রস খাইতে খুব বালা লাগছে! এর সাথে ছবি তোলার পোজগুলা (ভঙ্গি) দারুণ ছিল। পোসগুলো দেখতে ভালো, তুলতে ভালো, পোস্ট করতেও ভালো।’

তারপর অপেক্ষমাণ সেই রস পেয়ে এক নিঃশ্বাসে পান করে রাতের ভাবনাকে সফল করি। এবার যাবার পালা। রস পানের পর এক বন্ধুর মুখে কথার খই ফুটতে শুরু করে। ভ্যানে চড়েই সে শুরু করে দেয় ভাষণ, গান। পুরো যাত্রায় আমাদের আনন্দে রেখেছে সে। চলতে চলতে শেখপাড়া বাজারে এসে এককাপ কুমকুম দুধ চা পান করে নিজেকে আরেকটু ঝাকানাকা করে নেই।

সকলের থেকে বিদায় নেওয়া মুহূর্তে মন থেকে এতটুকুই আশা অনুভব করি নোয়াখালী-ফেনী-লক্ষ্মীপুরের (নোফেল) এই বন্ধন অটুট থাকুক যুগ-যুগান্তর।
 

Link copied!