• ঢাকা
  • রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩০, ২৪ শা'বান ১৪৪৬

বাউ মি‌ষ্টি আলু-৫ চাষে হেক্টর প্রতি ৩০ টন ফলন


বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৮:৪৫ পিএম
বাউ মি‌ষ্টি আলু-৫ চাষে হেক্টর প্রতি ৩০ টন ফলন
বাউ মিষ্টি আলু-৫। ছবি : প্রতিনিধি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃ‌বি) একদল গবেষক উচ্চ ফলনশীল নতুন জা‌ত ‘বাউ মিষ্টি আলু-৫’ উদ্ভাবন ক‌রে‌ছেন‌। সারা বছরই চাষ উপযোগী এই আলু ৯০ দি‌নে স্থানীয় জা‌তের চে‌য়ে তিন গুণ বে‌শি ফলন পাওয়া যায়। সাধারণ আলু প্রতি হেক্টরে ১০ দশমিক ২৫ টন ফলন দিলেও বাউ মিষ্টি আলু-৫ ৩০ টনের বেশি ফলন দেয়। প্রতি গাছে ২০০-৩০০ গ্রাম ওজনের ৬-৭টি আলু পাওয়া যায়।

বাকৃ‌বির কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম আরিফ হাসান খানের নেতৃত্বে একদল গবেষক এই মিষ্টি আলুর উচ্চ ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন।

প্রধান গ‌বেষক অধ‌্যাপক আ‌রিফ হাসান জানান, এই আলু‌তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও বিদ্যমান। এ ছাড়া ভিটামিন বি, সি, কে, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, এবং জিঙ্ক বিদ্যমান থাকায় অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন। অ্যান্থোসায়ানিন ও ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদানও আছে। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপযোগী।  কন্দে শুষ্ক পদার্থের পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ । প্রতি ১০০ গ্রাম কন্দে ৭ দশমিক ৮ গ্রাম গ্লু‌কোজ, শূন্য দশমিক ১৫ মিলিগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ৩ দশমিক ৯ মিলিগ্রাম অ্যান্থোসায়ানিন এবং ১৫ মিলিগ্রাম ফ্যানোলিক উপাদান পাওয়া যায়।

ময়মনসিংহ সদরের কৃষক হাসান বলেন, “স্থানীয় আলু চাষে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও বাজারে দাম কম পাওয়ায় চাষ করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ত‌বে, এই জাতের আলু চাষ করে গড়ে আমরা প্রতি ১০ বর্গ মিটারে ৩০ কেজি পর্যন্ত ফলন পে‌য়ে‌ছি। অন্যান্য স্থানীয় জাতের প্রতি গাছে ৭০০-৭৫০ গ্রাম আলু ধরলেও এই জাতের আলুতে ১২০০-১৫০০ গ্রাম পর্যন্ত ফলন পেয়েছি।”

মিষ্টি আলুর গবেষণা দলের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মুন মোদক বলেন, “গোলা‌পি বেগুনি ও কমলা এই তিনটি রঙে আলু নিয়ে গ‌বেষণা ক‌রে‌ছি। কমলা রঙের আলু গাজরের বিকল্প হিসেবে সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। বেগুনি রঙের গোল  পুড়িয়ে খেলে দারুণ স্বাদ পাওয়া যায়, বিশেষ করে পুড়ানোর পর এতে গ্লুকোজ ও সুগারের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণ গোলাপী রঙের আলুগুলো সবজি হিসেবে রান্না করা যায়, আবার পুড়িয়েও খাওয়া যায়।”

প্রধান গবেষক অধ্যাপক আরিফ হাসান খান আরও জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় মিষ্টি আলুর চাষ হয়। উৎপাদন কম হওয়ায় ঘাট‌তি থে‌কেই যায়। ত‌বে আমা‌দের উদ্ভাবিত আলুর নতুন সম্ভাবনা দেখা গে‌ছে। সারা বছর চাষ উপ‌যোগী হ‌লেও রবি মৌসুমে (১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চ) এর ফলন ভালো হয়। এই মৌসুমে ময়মনসিংহ, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল ও খুলনায় বাউ মিষ্টি আলু-৫–এর চারা সরবরাহ করা হয়েছিল। আলু চাষ করে অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

Link copied!