রাজধানীতে গণস্বাক্ষরতা অভিযান এর আয়োজনে এসএসসিতে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এতে অংশ নিয়েছে সারাদেশ থেকে ৪২টি জেলা থেকে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও উন্নয়নকর্মী।
মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
দিনব্যাপী দুই অধিবেশনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া রোধ করতে ১৫টি সুপারিশ উপস্থাপন করে। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক সচিব এন আই খান, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ড. জাফর ইকবাল, বিশিষ্ট সংস্কৃতিজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সংগীত শিল্পী রাহুল আনন্দ, নকীব খান, ফাহমিদা নবী, এভারেস্ট বিজয়ী এম এ মুহিত প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছ, এর জন্য কষ্ট হয়েছে সকলেই বোঝে তা। কিন্তু এটাই শেষ নয়। মনে রাখবে জীবনে যারাই কিছু করতে চেয়েছে তারাই ধাক্কা খেয়েছে। তোমরা এবার পরীক্ষা দিতে বসো, নিশ্চয়ই পাশ করবে। মনে রাখবে উপদেশে কাজ হয় না। পড়ার আগে না পড়া না বুঝে মুখস্থ করবে না। তাহলে সব ভুলে যাবে। বোঝার চেষ্টা করো, চিন্তা করো। তারপর না বুঝলে প্রশ্ন করো নিজেকে কোন জায়গায় বুঝছো না। তোমাদের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। মনে মধ্যে তেজ আনতে হবে, আমি পারব।”
বক্তারা আরও বলেন, “পরীক্ষার ফলাফল শুধু শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বা প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করে না। এজন্য পরিবার, সমাজ, বিদ্যালয়, বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা, ব্যবস্থাপনাও দায়ী। শিক্ষা পরিবারের কর্মী হিসেবে আমরাও এ দায় এড়াতে পারি না। শিক্ষকদের পড়ালেখার ব্যাপারে সচেতন হওয়ার জরুরি। কোনো শিক্ষার্থী না বুঝলে তাকে বার বার বোঝাতে হবে। বকা দিয়ে বোঝালে তারা কিন্তু ভুলে যাবে।”
পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া রোধ করতে ১৫ সুপারিশ
পরীক্ষায় অকৃতকার্য রোধ করতে সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, পরীক্ষার পূর্বে প্রস্তুতিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমে সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ফলাফল প্রকাশের পরপরই অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ভিত্তিক অনুপ্রেরণামূলক কাউন্সেলিং সভা আয়োজন করা। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা/প্রশিক্ষণের সাথে যুক্ত হওয়ার পরিবেশ সুযোগ সৃষ্টি। শিক্ষাব্যয় কমিয়ে এনে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা চালু ও শিক্ষায় সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা। কোনো পদ খালি না রাখা। এজন্য নিয়োগযোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রস্তুত করা। এনটিআরসিএর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান/ত্বরান্বিত করা। সকল শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণ করা। মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী/আদিবাসী জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার জন্য উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ করা। শতভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি প্রদান করতে হবে। ন্যূনতম ৫০০ টাকা পর্যায়ক্রমে ১০০০ টাকা হওয়া উচিত। সকল বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি বেশি মনোযোগ ও গুরুত্ব দিতে হবে। সকল বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করা। বিদ্যালয় মনিটরিং শক্তিশালী করতে হবে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে নতুনত্ব ও শক্তিশালী করতে হবে। অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ট্রেডভিত্তিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। তাদের আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং কার্যক্রমের আওতায় আনা প্রয়োজন এবং অকৃতকার্যরা যাতে ঝরে না পড়ে বিশেষ করে শিশুশ্রম এবং বাল্যবিবাহ রোধে অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে।