জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা। অন্যথায় রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) প্রশাসনিক ভবন অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) সভাপতি বেলাল হোসেন এ ঘোষণা দেন।
মানববন্ধনে জাবিসাস সভাপতি বেলাল হোসেন চার দফা দাবি উত্থাপন করেন।
দাবিগুলো হলো, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার নিশ্চিত করা, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল প্রশাসনের পদত্যাগ করা, নিরপেক্ষ আচরণ না করায় তদন্ত কমিটির গাফিলতি খতিয়ে দেখা ও আবাসিক হলের নিয়ন্ত্রণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে নেওয়া।
মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে অংশগ্রহণ করে ছাত্র অধিকার পরিষদ জাবি সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখা ও সাংস্কৃতিক জোট।
মানববন্ধনে ছাত্র অধিকার পরিষদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নেতা জহির ফয়সাল বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চামড়া গণ্ডারের মতো হয়ে গেছে। লজ্জার সঙ্গে বলতে হয় এই প্রশাসনের গাফিলতির জন্যই জাতির বিবেক সাংবাদিকদেরও মানববন্ধন করতে হয় সুষ্ঠ বিচারের জন্য। প্রশাসন বলেছে, গণরুম সংস্কৃতি রোধে জিরো টলারেন্স। কিন্তু কোনো হল প্রশাসন এই ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ-ই করছে না। হলের সিট বণ্টনে প্রশাসন কোনো ভূমিকা পালন করে না। হলের সিট লিস্ট করা, বন্টন করার ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন পূর্ণভাবে হস্তক্ষেপ করে। এই অথর্ব প্রশাসন যদি তাদের দায়িত্ব পালন করতে না ই পারে তাহলে তাদের উচিৎ পদত্যাগ করা।”
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি রাকিবুল হক রনি বলেন, “যখন সাংবাদিককে গেস্ট রুমে পেটানো হয়, তখন হল প্রশাসন কোথায় ছিল। আসলে হল প্রশাসন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের লেজুড়বৃত্তি করে। পাঁচ দিনের মধ্যে নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ এক মাস পার হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে নি।”
জাবিসাস সভাপতি বেলাল হোসেন বলেন, “আমাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে- তদন্ত কমিটির রিপোর্টে ভুক্তভোগীর কোনো বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়নি। অভিযোগ বিষয়ে কোনো তথ্য উঠে আসেনি। অভিযুক্তদের বক্তব্য বিস্তারিত উঠে এসেছে কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য সংকোচ করা হয়েছে।”
এ সময় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “সাংবদিক নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করেনি।”
মানববন্ধনে সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলকামা আজাদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, ছাত্র ফ্রন্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কনৌজ ক্রান্তি রায়, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ প্রীতম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা জহির ফয়সাল, কালের কণ্ঠের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি শুভ আনোয়ার, জাবিসাস যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন।
এর আগে, গত ২ আগস্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে কর্মরত এক গণমাধ্যমকর্মীকে ‘গেস্ট রুমে’ ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে হলটির ৮ ছাত্রলীগ নেতাকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে ‘অবাঞ্ছিত’ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা। অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের আসাদ হক ও আরিফ জামান সেজান, ৪৭ তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের হাসিবুল হাসান রিশাদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাইহান বিন হাবিব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ্ এবং ৪৮ তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগের জাহিদ হাসান।
এছাড়া অভিযুক্ত এসব ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। তবে দীর্ঘ সময় পার হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।