রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রিক্তা আক্তারের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট দ্রুত সময়ের মধ্যে পেশসহ ছয় দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকেলে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের নিকট স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম হাসিবুল আলম প্রধান, বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও শিক্ষার্থীরা।
স্মারকলিপিতে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত স্বামী ফলিত রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাব্বি ও তার সহযোগীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা, রিক্তার পরিবারকে আইনি সহায়তা ও ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা এবং দোষী সাব্যস্ত হলে তার মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
এছাড়া রিক্তা নিহতের ঘটনাকে যারা আত্মহত্যা ও তার চরিত্রকে কলুষিত করা ও মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত অভিপ্রায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপাচার্য বলেন, এগুলো আমাদেরও একই দাবি। তবে ঘটনাটিকে এক্ষুনি আত্মহত্যা বা হত্যা বলা যাবে না। কেননা চূড়ান্ত প্রতিবেদন হলেই সেটা বলা যাবে। আর বহিষ্কারের বিষয়টি তো অটোমেটিক হয়েই গেছে। বর্তমানে সে জেলে রয়েছে।
আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, আসলে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কিছু করতে পারব না। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে এটা নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি সহযোগিতা করব। এছাড়া তার পরিবারের নামে একটা একাউন্ট খোলা হলে সবার সম্মিলিত উদ্যোগে থেকে ফান্ডিং করে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা আমরা দিতে পারব। এছাড়া দোয়া অনুষ্ঠানের জন্য নিজ থেকে ১০ হাজার টাকা কালকের মধ্যে পাঠাবেন বলে জানান।
ফরেনসিক রিপোর্টের বিষয়ে তিনি জানান যে দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করা হয় সেজন্য আদেশ নয় বরং নির্দেশ দিয়েছেন।
স্মারকলিপি হস্তান্তরের সময় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে প্রমুখ।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) রাত ১২টার দিকে রাজশাহী নগরীর ধরমপুর পূর্বপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে রিক্তা আক্তার (২১) নামের ওই শিক্ষার্থীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ
(রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই বাসায় তার স্বামী রাব্বির সঙ্গে থাকতেন রিক্তা। দুইবছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিবাহ হয়। তবে ঘটনার আগে তাদের মধ্যে বিবাদ চলছিল বলে জানা যায়।
এদিকে ঘটনাটিকে অভিযুক্ত রাব্বির লোকজন আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও ছাত্র উপদেষ্টার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ (রাব্বীকে) অনুযায়ী রিক্তার সহপাঠী ও পরিবার সেটি মানতে নারাজ। যদিও ইতোমধ্যে রাব্বিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে বিষয়টি ময়নাদতদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বলা যাবে যে এটি আত্মহত্যা ছিল নাকি হত্যা।