• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভিসির ভবনে খাবার নিয়ে ঢুকতে পারলেন না শিক্ষকরা


সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৪, ২০২২, ০৯:৪১ পিএম
ভিসির ভবনে খাবার নিয়ে ঢুকতে পারলেন না শিক্ষকরা
ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অবরুদ্ধ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবনে তার জন্য খাবার ও ওষুধ নিয়ে যেতে দেননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। 

সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে খাবার নিয়ে যেতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আলমগীর কবীরসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে ফিরে যান তারা।

এ সময় শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে প্রক্টর আলমগীর কবীর বলেন, “বাসভবনে উপাচার্যের সঙ্গে আরও কয়েকজন শিক্ষক এবং কর্মকর্তা রয়েছেন। সেখানে গতকাল (রোববার) থেকে বিদ্যুৎ নেই। পানি ও খাবার সংকটে তারা কষ্ট করছেন। এছাড়াও উপাচার্য অসুস্থ। আমরা জানি না তার কী অবস্থা। তার জন্য আমরা ওষুধ নিয়ে যেতে চাই। সেখানে একজন শিক্ষকও অসুস্থ। আমরা তাকে দেখতে যেতে চাই, যেন প্রয়োজনে আমরা তার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি।”

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, “যদি কেউ এর ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে আমরা গিয়ে তার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিব। যদি খাবার প্রয়োজন হয় তাহলে আমরা তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে দিব।”

পরে শিক্ষকরা ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে খাবার নিয়েই ফিরে যান।

এর আগে গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন বিকেল থেকেই উপাচার্যের বাসভবনের সামনে মানবপ্রাচীর তৈরি করে রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। 

গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। 

পরে এ ঘটনায় দুইশ থেকে তিনশ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আন্দোলনরত দুইশ-তিনশ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটাানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ে। এছাড়া পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। 

এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, হলে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে তারা বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদকে কল করেন। প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, “বের হয়ে গেলে যাও, কোথায় যাবে? আমার ঠেকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘কীসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।”

পরে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। এরই মধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।

তার আগে বিকেলে তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় উপাচার্যকে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। 

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে ওই নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে তার বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই অসুস্থ। এ অবস্থার মধ্যেও কর্মসূচি চালিয়ে যেতে অনড় তারা। 

Link copied!