হরহামেশাই টিভির পর্দা কিংবা পত্রিকার পাতাতে দেখা যায় খোলা আকাশ কিংবা গাছ তলায় বসে চেয়ার বেঞ্চ পেতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার দৃশ্য। সেই দৃশ্যের পেছনে গল্প থাকে শ্রেণিকক্ষে জায়গা সংকুলান কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে শ্রেণিকক্ষের ক্ষয়ক্ষতি। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সাম্প্রতিক খোলা আকাশের নিচে দর্শন বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস খোলা আকাশের নিচে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ক্লাস অনুষ্ঠিত হওয়ার পেছনে শ্রেণি কক্ষে জায়গা সংকুলান কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত কোনো ঘটনার কারণ নেই।
জানা যায়, প্রত্যেক সেমিস্টারের শেষ ক্লাসটি উন্মুক্ত স্থানে নেওয়ার চেষ্টা করেন দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোছা. রেবেকা সুলতানা। গেল সপ্তাহে ২০২০-২১ সেশনের স্নাতক প্রথম বর্ষের ১০৬ কোর্সের (ইন্ট্রোডাকশন টু সাইকোলজি) এই ক্লাসটি নেন তিনি। এ সময় প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ ঘটানো ও প্রকৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে পঠনপাঠনের অনুভূতি কী রকম হয় সেটা অনুভব করাতে ব্যতিক্রমধর্মী এই ক্লাসের আয়োজন।
খোলা আকাশের নিচে এমন ব্যতিক্রমধর্মী ক্লাসের ব্যাপারে কথা হয় অধ্যাপক রেবেকা সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন, “শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে করতে শিক্ষার্থীদের নাভিশ্বাস উঠে যায়। শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনাতে সব সময় ভিন্ন একটা স্বাদ চায়। তাছাড়া পরবর্তী সেমিস্টারে যেন শিক্ষার্থীদের ক্লান্তি চলে না আসে সেজন্য এ অভিনব পন্থায় ক্লাস নেওয়া।”
রেবেকা সুলতানা আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আমরা একেবারেই ক্লাসরুমের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় মানে হলো বৈশ্বিক জ্ঞানের জায়গা। যেখানে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞানকে একীভূত করবে। সেই জ্ঞান তো ক্লাসের মধ্যে নাও পেতে পারে একজন শিক্ষার্থী। শিক্ষাবিদ নুনামের কথা টেনে এনে বলেন, everything isn’t learning in the class... সবকিছু তো ক্লাসের মধ্যে পাবেন না, আপনাকে বাইরে যেতেই হবে। তাছাড়া রবীন্দ্রনাথের বস্তুবাদের সঙ্গে যে ভাববাদের একটি মিল রয়েছে, সেই ভাববাদ ভাবতে গেলেই তো প্রকৃতির কাছে যেতে হবে।”
ঢাবির এই শিক্ষক বলেন, “আমি দেখেছি বিশ্ব ভারতীতে বা শান্তিনিকেতনে বেশিরভাগ ক্লাসই গাছের নিচে হয়। সেখান থেকে যারা পড়াশোনা করেছেন তাদের অনেকেই নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বা বিশ্ব নাগরিক হিসেবে তাদের সুখ্যাতি রয়েছে। তাছাড়া বদ্ধ শ্রেণিকক্ষে যতটা না মনোযোগ থাকে, তার চেয়ে বেশি মনোযোগ বৃদ্ধি পায় যদি ভিন্ন পরিবেশে হঠাৎ করে ক্লাসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেকারণে এদিন যে বিষয়ে লেকচার দেয়া হয়, পুরোটায় তাঁর জীবন ভিত্তিক।”
শেখ মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, “এমন ক্লাস আগে করা হয়নি। তবে বেশ উপভোগ করেছি। তাছাড়া ম্যাম এ ক্লাসে জীবনকে কীভাবে পরিচালিত করতে হবে, জীবনে চলার পথে কোন সমস্যা আসলে তা কিভাবে সমাধান করতে হবে, তাও শিখিয়েছেন। হয়তো তার উপদেশগুলো জীবনে চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে।”
জুয়েনা আলম মুন আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “অভিজ্ঞতার ঝুলিতে এক নতুন অভিজ্ঞতা যুক্ত হল। ক্লাসের বাইরে গিয়ে ক্লাস করা। প্রতি সপ্তাহে ম্যামের ক্লাসের জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। তবে ক্লাসের বাইরে এ ক্লাস অন্য ক্লাসগুলোর তুলনায় বেশি উপভোগ্য হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এমন বন্ধুসুলভ, প্রাণোচ্ছল শিক্ষক পাবো তা কখনো ভাবিনি।”