• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শাবির ভিসিকে যে পরামর্শ দিলেন শিক্ষামন্ত্রী


শাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২২, ০৮:৫৩ পিএম
শাবির ভিসিকে যে পরামর্শ দিলেন শিক্ষামন্ত্রী
ছবি: সংগৃহীত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) উপাচার্য কার্যালয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনার পর শিক্ষামন্ত্রী এ পরামর্শ দেন। 

এর আগে সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। পরে বৈঠক শেষ হয় ৭টা ৩৫ মিনিটে।

পরে রাত ৭টা ৪০ মিনিটে সংবাদ সম্মেলন করেন বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি- গণমাধ্যমকে এ কথাই জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন।

প্রথমে মন্ত্রী যান শিক্ষার্থীদের কাছে। তাদের দাবির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না দিয়ে বললেন, উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে তুলবেন। অন্যান্য দাবি পূরণ করা হবে পর্যায়ক্রমে।

এরপর মন্ত্রী যান উপাচার্যের কার্যালয়ে। শিক্ষকদের সঙ্গে দীপু মনির বৈঠকে যোগ দিতে নিজ বাসভবন থেকে ২৬ দিন পর বের হয়ে সেখানে যান উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

সেখানে সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এবার কিছু বললেন না দীপু মনি। প্রায় ১৫ মিনিটের আলোচনা শেষে উপাচার্যের বক্তব্যও পাওয়া গেল না। পরে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন।

ইশফাকুল হোসেন বলেন, “মন্ত্রী আলোচনায় শিক্ষকদের প্রতি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি উপাচার্যকে তার দায়িত্ব পালন চালিয়ে যেতে বলেছেন।”

কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলামও গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, 

কোষাধ্যক্ষ বলেন, “উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছে তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিই সব সিদ্ধান্ত দেবেন।”

এছাড়া ক্যাম্পাসের অচলাবস্থা দ্রুত নিরসন করতে শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন- এমন একটি কথাও জানিয়ে রাখেন আনোয়ারুল।

এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দুপুরে সার্কিট হাউসে আলোচনায় বসেন মন্ত্রী। বৈঠক শেষে মন্ত্রী বলেন, “রাষ্ট্রপতিই উপাচার্যের নিয়োগ বা অপসারণের সিদ্ধান্ত দেন। এ কারণে শাবি উপাচার্যের অপসারণ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সব বক্তব্য রাষ্ট্রপতিকেই অবহিত করবেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন রাষ্ট্রপতি।”

এছাড়া ভিসি পদত্যাগের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের যে এক দফা দাবি এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “শিক্ষার্থীরা তাদের এক দফা দাবি পেশ করেছে। তাদের এক দফা দাবি সম্পর্কে যে বক্তব্য সেটি আমরা মহামান্য আচার্যকে অবহিত করবো। যেহেতু আচার্যই একজন ভিসি নিয়োগ ও অপসারণ করেন, সেহেতু সে বিষয়ে আচার্যই সিদ্ধান্ত নিবেন।” 

এদিকে বিকেল ৩ টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে সার্কিট হাউসে যান। 
 
প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন : মোহাইমিনুল বাশার রাজ, ইয়াসির সরকার, নাফিসা আনজুম, সাব্বির আহমেদ, আশিক হোসাইন মারুফ, সাবরিনা শাহরিন রশীদ, সুদীপ্ত ভাস্কর, শাহরিয়ার আবেদিন, আমেনা বেগম, মীর রানা, জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব। 

শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় শিক্ষার্থীরা ভিসি পদত্যাগের এক দফা দাবি, আহত শিক্ষার্থী সজল কুন্ডুর ভবিষ্যৎ জীবনের দায়িত্ব নেওয়া, ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, শিক্ষার্থীদের উপর মামলা প্রত্যাহার, মোবাইল একাউন্টগুলো সচল করাসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেন। 

এদিন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুবিভাগের সেক্রেটারিসহ তিন কর্মকর্তা। শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদলে রয়েছেন- মোহাইমিনুল বাশার রাজ, ইয়াসির সরকার, নাফিসা আনজুম, সাব্বির আহমেদ, আশিক হোসাইন মারুফ, সাবরিনা শাহরিন রশীদ, সুদীপ্ত ভাস্কর, শাহরিয়ার আবেদীন, আমেনা বেগম মীর রানা ও জাহেদুল ইসলাম অপূর্ব।

এর আগে শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে সিলেটে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি। প্রথমে সিলেটের সার্কিট হাউসে আসেন তিনি। পরে বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন এবং হযরত শাহজালাল (রহঃ) এর মাজার জিয়ারত করেন। 

গত ১৩ জানুয়ারি শাবিপ্রবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কয়েকশ ছাত্রী।

১৬ জানুয়ারি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে। এ সময় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এক দফা দাবিতে রূপ নেয়।

দাবি পূরণ না হওয়ায় ১৯ জানুয়ারি বিকেল ৩টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী।

২৬ জানুয়ারি সকালে অনশনস্থলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক। তারাই শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান।

Link copied!